গত ৪ জুন দেশের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয় বারের জন্য সরকার গঠন করতে চলেছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ। প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদী।
রবিবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তৃতীয় বারের জন্য শপথগ্রহণ করতে চলেছেন মোদী। এনডিএ-র শরিকেরা তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এবং নির্বাচিত প্রার্থীরা তাঁকে নেতা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
তবে এ বারের ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। যা মোদীর দলকে কিছুটা অস্বস্তিতে রেখেছে। জোটের শরিকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিজেপি।
বিজেপির এ বারের নির্বাচনের ফলাফলে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল মোদীর প্রাপ্ত ভোট। যে ব্যবধানে তিনি উত্তরপ্রদেশের বারাণসী আসনটি জিতেছেন, তা দলের অস্বস্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বারাণসী থেকে মোদীর জয়ের ব্যবধান এ বার ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৫১৩টি ভোট। শতাংশের হিসাবে যা ১৩.৪৯ শতাংশ। গত দু’বারের চেয়ে এই ব্যবধান বিপুল পরিমাণে কমেছে। অর্থাৎ, আগের চেয়ে অনেক কম ভোট পেয়েছেন মোদী।
২০১৪ সালে বারাণসী থেকে ৫.৮১ লক্ষ ভোট পেয়েছিলেন মোদী। ব্যবধান ছিল ৩.৭ লক্ষ। তিনি হারিয়েছিলেন আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে। সে বার ওই কেন্দ্রে কংগ্রেস অজয় রাইকে প্রার্থী করেছিল।
২০১৯ সালে বারাণসীতে মোদীর ব্যবধান আরও বৃদ্ধি পায়। তিনি ওই কেন্দ্র থেকে ৬.৭৪ লক্ষ ভোট পেয়েছিলেন। ব্যবধান ছিল ৪.৭৯ লক্ষ। সে বার তাঁর নিকটতম প্রতিপক্ষ ছিলেন সমাজবাদী পার্টির শালিনী যাদব।
গত দু’বার প্রায় চার লক্ষ এবং পাঁচ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোদী। এ বার আর তা হয়নি। বারাণসী কেন্দ্রেই এ বার তাঁর নিকটতম প্রতিপক্ষ হয়েছেন কংগ্রেসের অজয় রাই।
অজয় শুধু মোদীর ভোটের ব্যবধানই কমাননি, গণনা শুরুর পর প্রাথমিক ‘ট্রেন্ডে’ এক বার তাঁকে পিছনেও ফেলে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, বারাণসী কেন্দ্রে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য পিছিয়ে ছিলেন স্বয়ং মোদী।
নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, এটাই মোদীর সর্বনিম্ন জয়-ব্যবধান। শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রীদের ইতিহাসেও এত কম জয়ের ব্যবধান বড় একটা দেখা যায় না।
মোদীর আগে কেবল এক জন প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন, যিনি এর চেয়েও কম ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন। তিনি চন্দ্র শেখর। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময়ে তিনি কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯১ সালে চন্দ্র শেখরের জয়ের ব্যবধান ছিল দেড় লক্ষের চেয়েও কম। শতাংশের বিচারে তা মাত্র ১২.৭৮ শতাংশ। তিনি জিতেছিলেন, তবে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল বেশ কম। মেয়াদ ছিল মাত্র ২২৩ দিনের।
চন্দ্র শেখর ছাড়া দেশের ইতিহাসে আর কোনও প্রধানমন্ত্রী নেই, যিনি দেড় লক্ষের কম ব্যবধানে জিতেছেন। মোদীই ওই তালিকায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন হয়ে রয়ে গেলেন।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নির্বাচনে হেরে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। ১৯৭৭ সালে ৩৪.০৯ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
ভোট ব্যবধানের তালিকায় এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে উপরে রয়েছেন রাজীব গান্ধী। ১৯৮৪ সালে তিনি ৭২.১৮ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
এই তালিকাতেই তিন নম্বরেও রয়েছে মোদীর নাম। ২০১৯ সালে তাঁর জয়ের ব্যবধান শতাংশের বিচারে ৪৫.২২ শতাংশ। তার আগে রয়েছে রাজীব গান্ধীর দু’বারের নজির— ১৯৮৪ এবং ১৯৮৯।
লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এক জন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে দেড় লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয় একেবারেই আশানুরূপ নয় বলে মনে করছেন অনেকে। বিরোধীরা কেউ কেউ দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন মোদী।
বিজেপি তথা এনডিএ শিবিরের অন্দরেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আরও কিছু নাম উঠে এসেছিল মোদীর এই ফলের পর। মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহান ৮ লক্ষের বেশি ভোটে জিতেছেন। অনেকে তাঁর নাম করেছিলেন এই পদের জন্য। কেউ কেউ আবার নিতিন গডকড়ীর নামও করছিলেন।
তবে সর্বসম্মতিক্রমেই এনডিএ শিবির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আবার মোদীকেই বেছে নিয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে তৃতীয় বারের জন্য শপথগ্রহণ করতে চলেছেন।