প্রতীকী ছবি।
দিল্লির ধাঁচে এ বার গোটা দেশে সেরো সমীক্ষা করার পরিকল্পনা নিল কেন্দ্র। দেশে করোনা সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে, তা খতিয়ে দেখতেই এই সিদ্ধান্ত। এ মাসের গোড়াতেই দেশ জুড়ে ওই পরীক্ষা হওয়ার কথা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহের মাথায় মানবদেহে ওই রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে। যা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা সম্ভব। এর আগে মে মাসে একবার সেরো সমীক্ষা করেছিল আইসিএমআর। সে সময়ে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে কত লোক সংক্রমিত হয়েছিলেন, তার একটি চিত্র পাওয়া গিয়েছিল।
গত তিন-চার মাসে সংক্রমণ আরও বেড়েছে। এখন দিনে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ৫৫ হাজারও পার করে গিয়েছে। সুতরাং জনগোষ্ঠীর কত অংশে ওই সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তা বোঝার জন্যই ফের একবার সেরো সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত। প্রথম পরীক্ষার চেয়ে এ ক্ষেত্রে নমুনা সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। যাতে সামগ্রিক চিত্রটি আরও ভাল ভাবে ধরা পড়ে।
ঠিক হয়েছে, করোনা আক্রান্তের সংখ্যার ভিত্তিতে একটি রাজ্যকে তিন ভাগে (বেশি-মধ্যম-কম) ভাগ করা হবে। তার পর সেখানকার জনগোষ্ঠীর ভিতর থেকে বাছবিচার না করে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। আইসিএমআর সূত্রে বলা হয়েছে, এই রোগের ৮০ শতাংশ রোগীই উপসর্গহীন। ফলে অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা অজান্তেই সংক্রমিত হয়ে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। জানতেও পারেননি। সেরো সমীক্ষায় অজ্ঞাত সেই জনসংখ্যাকে ধরা যায়। ফলে কোনও একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বা রাজ্যে ঠিক কত লোক সংক্রমিত হয়েছেন, তার একটি ধারণা সামনে আসে। যেমন গত সপ্তাহে দিল্লির সেরো সমীক্ষার ফল এলে দেখা গিয়েছে, মোট জনসংখ্যার ২৩.৪৮ শতাংশ দিল্লিবাসী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইরোলজিস্টদের মতে, যখন দিল্লির ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ সংক্রমিত হয়ে পড়বেন, তখন নতুন সংক্রমণ কমে আসবে। কারণ তত দিনে জনগোষ্ঠীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (হার্ড ইমিউনিটি) তৈরি হয়ে যাবে। ফলে সংক্রমণ ছড়ানো কমে যাবে।
এর আগে মে মাসে দেশ জুড়ে প্রথম ধাপে ২১টি রাজ্যের ৬৫টি জেলায় ও দ্বিতীয় ধাপে ১০টি হটস্পট এলাকায় রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়— হটস্পট নয় এমন এলাকায় ০.৭৩ শতাংশ জনগণের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সূত্রের মতে, দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় দেখা যায় কন্টেনমেন্ট জ়োন বা গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত এলাকায় প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যক্তি সংক্রমিত। যার অর্থ, সরকারের সব চেষ্টা সত্ত্বেও কন্টেনমেন্ট জ়োনে সংক্রমণ রোখা যায়নি। যদিও এর চূড়ান্ত পরিসংখ্যান সরকারি ভাবে জানায়নি আইসিএমআর। অভিযোগ, ওই তথ্য সামনে এলে কন্টেনমেন্ট এলাকায় সংক্রমণ রুখতে সরকারের ব্যর্থতা সামনে চলে আসতে পারে বলেই ঝুঁকি নিতে চাননি স্বাস্থ্য-কর্তারা।