অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সকালে আগরতলা বিমানবন্দরে। নিজস্ব চিত্র।
আগরতলার পথসভা থেকে বিজেপি-র ‘গুণ্ডাদের’ হুশিয়ারি দিলেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘‘ত্রিপুরার আকার পশ্চিমবঙ্গের দু’-তিনটি জেলার সমান। আমরা চাইলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোক আনলে বিজেপি-র গুণ্ডারা লুকানোর জায়না পাবে না। কিন্তু আমরা ওই পথে হাঁটি না।’’
‘‘ত্রিপুরায় আমরা প্রতিবাদ করছি। আমাদের সহকর্মীরা দিল্লিতে ত্রিপুরার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবাদ করছেন।’’ আগরতলায় একটি পথসভা করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। সেই মঞ্চেই এ কথা বলেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
সোমবার দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে আগরতলার ওরিয়েন্টাল চৌমোহনীতে তৃণমূলের পথসভা। কুণাল ঘোষ টুইট করে জানালেন, প্রতীকী প্রতিবাদ সভায় ভিড় না করার অনুরোধ করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। তবে একই সঙ্গে কুণালের আশঙ্কা, ‘বিজেপি-র প্ররোচনা চলছেই। ওখানেও ঝামেলা করতে পারে।’ তবে কুণাল জানিয়েছেন, যা-ই হোক না কেন প্রতিবাদ সভা হবেই।
এর আগে থানায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল ব্রাত্য, কুণাল, অর্পিতা, সুস্মিতাদের। সায়নীর সঙ্গে দেখা করতে এ বার থানায় যাচ্ছেন অভিষেক।
সায়নীর মামলার শুনানিতে আগরতলার আদালতে পৌঁছলো তৃণমূলের আইনজীবী দল। পৌঁছলেন অর্পিতা ঘোষ, ব্রাত্য বসুরাও। ওরিয়েন্ট চৌমহনীতে পথসভার প্রস্তুতি তৃণমূলের। অভিষেক হোটেল পোলো টাওয়ারে।
আগরতলা পূর্ব মহিলা থানায় রাথা হয়েছিল সায়নীকে। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ব্রাত্য, কুণাল, সুস্মিতা, অর্পিতারা। কিন্তু থানায় তাঁদের সায়নীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হল না। জানিয়ে দেওয়া হল, আইনজীবীরাই দেখা করতে পারবেন।
দুপুরে আগরতলায় পথসভা করার চেষ্টা করবে তৃণমূল, জানালেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, দুপুরে ওরিয়েন্ট চৌমহনীতে একটি পথসভা করার চেষ্টা করা হবে। হবে কি না জানি না। তবে যা-ই হোক দুপুর ৩টেয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন অভিষেক বন্দ্যেপাধ্য়ায়। তৃণমূলের মুখপত্র সূত্রে খবর, দুপুরে হোটেল পোলো টাওয়ারে সাংবাদিক বৈঠক করবেন অভিষেক।
সায়নীর সঙ্গে দেখা করতে থানায় পৌঁছলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষ এবং রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব।
ত্রিপুরার বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি নবেন্দু ভট্টাচার্যের অভিযোগ, ‘‘বিমানবন্দরে সন্দেহজনক ব্যাগ রাখার নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূল। এক ব্যক্তি ওই ব্যাগ নিয়ে বিমানবন্দরে রেখে পরের বিমানে ফিরে গিয়েছেন। জানতে চাই, কত টাকা দেওয়া হয়েছে তাকে এই কাজের জন্য!’’
থানায় তৃণমূলের উপর আক্রমণের পরও আগরতলার ডিজিপি বা আইজিপিকে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি বলে অভিযোগ করলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার সকালেও তাঁদের বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কনফারেন্সে বৈঠক করছেন ডিজিপি।
দুপুর ১২টায় সায়নীকে আদালতে তোলা হবে বলে সূত্রের খবর। সায়নীর জামিনের প্রক্রিয়ায় অভিষেক নিজে হাজির থাকার কথা অভিষেকের।
আগরতলার যে হোটেলে তৃণমূলের অন্য নেতারা রয়েছেন, বিমানবন্দর থেকে সেখানেই গিয়েছেন অভিষেক। সায়নী ঘোষকে কী ভাবে মুক্ত করা হবে তার আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে বৈঠক করছেন বলে সূত্রের খবর। সায়নীকে আজই তোলা হবে আদালতে।
পদযাত্রার অনুমতি না দেওয়া হলেও তৃণমূলকে পথসভার অনুমতি দিয়েছিল ত্রিপুরা প্রশাসন। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটে পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। অভিষেক জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ১২টার পর চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে পরের দিন দুপুর ১২টায় পথসভা। তিনি বলেন, ‘‘মঞ্চ বাঁধতে চার ঘণ্টা সময় লাগে। লোককে জানাতে সময় লাগে। আমরা কংগ্রেস-সিপিএম নই যে মাথা নামিয়ে সব সহ্য করব। ’’ পথসভা করবেন না জানিয়ে অভিষেক বলেন, দুপুর ৩টেয় সাংবাদিক বৈঠক করবেন।
তৃণমূলের যুবনেতা সায়নী ঘোষকে গ্রেফতার করা প্রসঙ্গে অভিষেক বললেন, ‘‘সায়নী কী এমন করেছিল যে ওকে গ্রেফতার করা হবে! স্লোগান দিয়েছিল। ‘খেলা হবে’ বলে স্লোগান দিয়েছিল। তেমন স্লোগান তো নরেন্দ্র মোদীও দিয়েছিলেন। তবে কি মোদীকেও গ্রেফতার করা হবে?’’
আগরতলা বিমানবন্দরে নেমে অভিষেক বললেন, ‘‘এখানে গণতন্ত্রের স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যমকে আক্রমণ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে আক্রমণ করা হচ্ছে। হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। আসলে ওরা আগরতলার মানুষকে ভয় দেখাতে চাইছে। আমি বলব, যা বলার আমাদের বলুন। আগরতলার মানুষ শান্তিপ্রিয় মানুষ। তাঁদের এভাবে আক্রমণ করবেন না।’’
আগরতলায় পৌঁছলেন অভিষেক। বললেন, ‘‘চূড়ান্ত নৈরাজ্য, জঙ্গলরাজ চলছে। ভয় দেখিয়ে তৃণমূলকে দমিয়ে রাখা যাবে না।’’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পদযাত্রার অনুমতি না দিলেও ত্রিপুরায় পথসভার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে তৃণমূলের তরফে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ত্রিপুরা সরকারের দেওয়া একটি প্রশাসনিক চিঠি টুইট করেছেন। তাতে ত্রিপুরা সরকার জানিয়েছে, রাজ্যে আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতির জন্য পদযাত্রার অনুমতি না দেওয়া হলেও তৃণমূল পথ সভা করতে পারে।
অভিষেক বন্দ্যাপাধ্যায়ের আগরতলা বিমান বন্দরে পৌঁছনোর কথা আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। তার আগেই সেখান থেকে উদ্ধার হল একটি সন্দেহজনক ব্যাগ। কালো রঙের ওই ব্যাগটির ভিতরে কী রয়েছে তা জানা যায়নি। তবে গোয়েন্দা কুকুর নিয়ে এসে আগরতলা বিমান বন্দর চত্বরে তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বম্ব স্কোয়াড।
ত্রিপুরায় অভিষেকের পদযাত্রা বাতিল করার কারণ সে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতি তা মেনে নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। জানালেন কুণাল ঘোষ। টুইটারে তিনি একটি চিঠির ছবি পোস্ট করেছেন। চিঠিটি ত্রিপুরায় অভিষেকের পদযাত্রা বাতিল করা সংক্রান্ত প্রশাসনিক চিঠি। তাতে পদযাত্রার বাতিলের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতির কথা। কুণাল লিখেছেন, ‘অভিষেকের পদযাত্রা বাতিল করল ত্রিপুরা সরকার। চক্ষুলজ্জায় নির্দেশে বলল সবার বাতিল। কিন্তু চিঠিতেই প্রমাণিত যে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। চিঠির বয়ানেই মানছে পুলিশ। খোদ রাজধানী আগরতলার বুকে এই অবস্থা। গুন্ডারাজ চলছে।
মানুষ বিচার করবেন।’
সোমবার সকাল ৯টার বিমানে ত্রিপুরার উদ্দেশে রওনা হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষের গ্রেফতারের কারণে রবিবার রাতেই ত্রিপুরা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অভিষেক। বিমানের অবতরণগত আইনি জটিলতার কারণে শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। উত্তর-পূর্বের কয়েকটি রাজ্যের বিমানবন্দরে সন্ধ্যা ৭টার পর বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকে। তার মধ্যে পড়ে আগরতলা বিমানবন্দরও। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে অভিষেক সেখানে যেতে পারেননি। তার পরির্বতে রাত ৮টায় বিশেষ বিমানে তিনি আগরতলা যেতে চেয়েছিলেন। সেই মোতাবেক প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষ অনুমতি দেওয়া হল না অভিষেককে। ফলে বাতিল হয় তাঁর রবিবারের ত্রিপুরা সফর।