বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা। তারই মোকাবিলায় র্যাফ ও সিআরপি। ইম্ফলে। ছবি: পিটিআই।
বাঁয়ে অমিতাভ বচ্চন, বাঁ চোখে পট্টি। ডান দিকে শাহরুখ খান, বাঁ চোখ ‘নষ্ট’। মাঝখানে খোদ প্রধানমন্ত্রীর ছবি। তাঁর চোখেও দেখা যাচ্ছে পট্টি বাঁধা। ছবিতে তিন জনের মুখেই অজস্র ছররা বা পেলেটের ক্ষত। ছবিগুলো সবই কম্পিউটারের কারসাজিতে সুপারইম্পোজ় করা। এমনই তিনটি ছবি দিয়ে তৈরি পোস্টারের উপরে লেখা— ‘যদি ছররার শিকার হওয়া মুখগুলো আপনাদের পরিচিত কারও হত?’ মণিপুরে বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর ছররা বন্দুক ব্যবহারের প্রতিবাদে এমনই প্রচার শুরু হয়েছে।
১০ জন ছাত্রের মাথা-মুখ ফুঁড়ে ঢুকেছে অজস্র পেলেট। কারও বাহু ছিন্নভিন্ন। ১৭ বছরের এল কিষান দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তার ডান কাঁধের কাছে বিরাট গর্ত। অস্ত্রোপচার করে তার শরীরে ঢোকা ৯০টির মধ্যে ৬০টি পেলেট বার করতে পেরেছেন ডাক্তারেরা। জাতীয় উশু খেলোয়াড় উত্তম সোইবামের মাথা ও মুখ থেকে বার করা হয়েছে ৬১টি পেলেট।
মণিপুরের বিক্ষোভ দমনে এই প্রথম র্যাফের ‘পেলেট গান’ ব্যবহার নিয়ে প্রতিবাদ চরমে। বলা হয়ে থাকে, এই অস্ত্র নাকি প্রাণঘাতী নয়। কিন্তু খুব কাছ থেকে ছোড়া হলে ছররাও মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। কাশ্মীরের নিরাপত্তা বাহিনীর ছররা বন্দুক ব্যবহারের ফলে অনেকের কী ভাবে চোখ নষ্ট হয়েছে— সেই ছবি আগেই দেখেছে দেশ। এ বার মণিপুরে প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ, নাবালক বা সদ্য-তরুণদের উপরে যে ভাবে ছররা বন্দুক চালানো হয়েছে, তা নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। চাপে পড়ে আইজি কে জয়ন্ত সিংহের নেতৃত্ব এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়েছেন মণিপুরের ডিজিপি। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহও আশ্বাস দিয়েছেন, ছাত্রদের উপরে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ হয়ে থাকলে তদন্ত করে দোষী পুলিশকর্মীদের সাজা দেওয়া হবে।
নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, দুই ছাত্রছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে ছাত্রসমাজকে উস্কে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাংলো, পৈতৃক বাড়ির মতো সংবেদনশীল এলাকায় হামলা চালাতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের রুখতে শেষ অস্ত্র হিসেবেই পেলেট গান ব্যবহার করতে হয়েছে। ছাত্রদের ব্যবহার করা পেপারওয়েট, লোহার টুকরো ইত্যাদির ছবি এক্স হ্যান্ডলে তুলে ধরে পুলিশের দাবি, নিরাপত্তাকর্মীরা আত্মরক্ষার্থে সংযত হয়েই ন্যূনতম বলপ্রয়োগ করেছেন।
চূড়ান্ত অসন্তুষ্ট মণিপুর শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। নাবালকদের অধিকার ও মানবাধিকারের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ও অহিংস উপায়ে বিক্ষোভ সামলানোর বিষয়ে মণিপুরের পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য ট্রেনিং ম্যানুয়াল তৈরি করতে বলেছে তারা। কমিশনের চেয়ারপার্সন মণিবাবু ফুরাইলাতপাম বলেন, নাবালকদের বিক্ষোভ থামাতে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেটের যথেচ্ছ ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত নয়। বরং পুলিশ শক্ত ব্যারিকেড গড়া, পাড়ায় পাড়ায় সতর্কতামূলক প্রচার চালানো বা জলকামান ব্যবহার করার পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ, ইম্ফল উপত্যকাকে এখনই কাশ্মীরের মতো বানিয়ে দিয়েছে র্যাফ। এ বার কাশ্মীর থেকে এসএসপিকে নিয়ে আসার মধ্যেও প্রশাসনের অন্য পরিকল্পনা থাকতে পারে।
এ দিকে, মায়ানমারের শরণার্থীদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করতে কেন্দ্রের কাছে অতিরিক্ত সময় চেয়েছিল মণিপুর। কেন্দ্র তথ্য সংগ্রহের সময়সীমা ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে মণিপুরের এক মানবাধিকার কর্মী রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরেন।