চাঁদনী চকের লাল কেল্লা থেকে দিল্লির বিধানসভা পর্যন্ত গভীর সুড়ঙ্গ রয়েছে! যে সুড়ঙ্গের কথা বহু দিন থেকে শোনা গেলেও এতদিন তার হদিস কিছুতেই মিলছিল না। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সন্ধান মেলেনি। বৃহস্পতিবার খোঁজ মিলল সেই রহস্যময় সুড়ঙ্গের!
দিল্লি বিধানসভা থেকে লাল কেল্লার দূরত্ব সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারের কিছু বেশি। অনুমান, সুড়ঙ্গটিও ততটাই লম্বা হবে।
বৃহস্পতিবার দিল্লি বিধানসভার একটি ঘরে প্রথম সুড়ঙ্গ-মুখটি দেখতে পাওয়া যায়। কৃত্রিম সবুজ ঘাসের কার্পেট কেটে উদ্ধার হয় সুড়ঙ্গের লোহার দরজা। সেটি সরাতেই দেখা মেলে ওই গভীর সুড়ঙ্গের।
ইতিহাসবিদদের অনুমান, প্রায় ১০০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল সুড়ঙ্গটি। দীর্ঘদিন কোনও রকম রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া পড়ে থাকায় সুড়ঙ্গ পথটি কী অবস্থায় রয়েছে, বা সেটি আদৌ যাতায়াতের উপযুক্ত রয়েছে কি না, তা অনুমান করা যাচ্ছে না।
দিল্লি বিধানসভার ওই সুড়ঙ্গ নিয়ে স্বভাবতই কৌতূহল জন্মেছে। কেন এই সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে বিস্তর জল্পনাও চলছে। তবে ইতিহাসবিদেরা এর সঙ্গে ব্রিটিশ-যোগ খুঁজে পেয়েছেন।
ইতিহাসবিদেরা জানাচ্ছেন, ১৯১২ সালে কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল ভারতের রাজধানী। দিল্লি বিধানসভা ১৯২৬ সালে আদালত হিসাবে ব্যবহার করা হত। সম্ভবত তখনই এই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল।
বন্দি বিপ্লবীদের আদালতের হাজিরার জন্য ব্রিটিশ সেনারা এই সুড়ঙ্গ পথই নাকি ব্যবহার করতেন। যার ফলে কোনও বন্দির পালালোর সুযোগও থাকত না।
সুড়ঙ্গ পথে আবার বন্দিদের থাকার ঘরও রয়েছে বলে অনুমান ইতিহাসবিদেদের। যদিও সেই ঘর পর্যন্ত এখনও পৌঁছনো যায়নি। সবেমাত্র সুড়ঙ্গের মুখের সন্ধান মিলেছে।
দিল্লি বিধানসভার অধ্যক্ষ রামনিবাস গোয়েল জানিয়েছেন, সুড়ঙ্গের ভিতরের কিছুটা যাওয়ার পর আর রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কারণ বিভিন্ন উন্নয়ণমূলক কাজের জন্য সুড়ঙ্গের পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুড়ঙ্গের শেষে পৌঁছতে গেলে অনেক খোঁড়াখুড়ির প্রয়োজন।
ব্রিটিশ আমলের মতো সুড়ঙ্গটি চলাচলের যোগ্য করা যাবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন তিনি। তবে এই ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ সাধারণ মানুষের সামনে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি এই সুড়ঙ্গের কিছু মেরামতি করে তা দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। আগামী বছর ১৫ অগস্ট দর্শকের জন্য সম্ভবত এই সুড়ঙ্গ খুলে দেওয়া হবে।
দিল্লি বিধানসভার ওই ঘরে থাকা সুড়ঙ্গের সঙ্কীর্ণ মুখ খুললেই প্রথমে চোখে পড়বে ৫ ফুট গভীর এবং ১৫ ফুট উঁচু একটি ঘর। সেই ঘর থেকেই সরু রাস্তা বরাবর সুড়ঙ্গ এগিয়ে যেতে থাকে। সুড়ঙ্গের ওই ঘরে দর্শকদের ঢুকে দেখার অনুমতিও দেওয়া হতে পারে।