কারান্তরালে কেজরীর দুই মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন এবং মণীশ সিসৌদিয়া। ফাইল চিত্র।
ব্যবধান মোটে ৯ মাসের। এই সময়ের মধ্যেই গ্রেফতার হলেন দিল্লি সরকারের দুই মন্ত্রী। গত ৩০ মে হাওয়ালার মাধ্যমে বেআইনি ভাবে টাকা লেনদেনের অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি আর এক তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই গ্রেফতার করল দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকে। দিল্লি পুরসভার মেয়র নির্বাচনে জয়, উপরাজ্যপাল মনোনীত সদস্যদের ভোটাধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়— একের পর এক ঘটনায় ‘স্বস্তি’তে ছিল আপ শিবির। কিন্তু সত্যেন্দ্রর পর দলের প্রধান কেজরীওয়ালের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সিসৌদিয়ার গ্রেফতারিতে ‘অস্বস্তি’তে আপ শিবির।
দেশের মূলস্রোতের রাজনীতি থেকে থেকে দুর্নীতিকে উৎখাত করার ডাক দিয়েই শুরু হয়েছিল আম আদমি পার্টি ওরফে আপের পথ চলা। দলের নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে ঝাড়ুকে বেছে নিয়ে কেজরীওয়ালরা যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি সম্মাজর্নীর আঘাতে বিদায় করবেন, এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই জনগণের মন জয় করে নিয়েছিল নবীন এই দলটি। দলটির সূচনালগ্ন থেকেই কেজরীওয়ালের সঙ্গী ছিলেন সিসৌদিয়া, সেই অন্না হজারের প্রতিবাদমঞ্চ থেকেই। ঘটনাচক্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেওয়া দলটির দুই মন্ত্রীই দুর্নীতির অভিযোগে জেলে। আবগারি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন মণীশ।
দুই মন্ত্রীকে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। কেজরীওয়াল সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্রর বিরুদ্ধে জোর করে ১০ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন দুর্নীতি-সহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত সুকেশ চন্দ্রশেখর। দিল্লির উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনাকে সুকেশ জানিয়েছেন যে, তিনি জেলবন্দি থাকার সময়ে তাঁকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্যেন্দ্র। তার জন্য সুকেশের কাছ থেকে নাকি প্রতি মাসে ২ কোটি টাকা করে নিতেন তিনি। ২০১৫ সাল থেকেই সত্যেন্দ্রকে তিনি চেনেন বলে চিঠিতে দাবি করেছেন সুকেশ। চিঠিতে এ-ও অভিযোগ করা হয়েছে যে, সত্যেন্দ্র সুকেশকে দক্ষিণ ভারতে আপের বড় কোনও পদে বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার জন্য মন্ত্রীকে মোট ৫০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন বলে দাবি তাঁর। সুকেশের অভিযোগ, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ প্রকাশ্যে আনার কথা বললে তাঁকে হুমকি দেন সত্যেন্দ্র। জানান, এই সংক্রান্ত কোনও খবর ফাঁস করে দিলে পরিণতি ভাল হবে না। তা ছাড়াও সত্যেন্দ্রর বিরুদ্ধে জেলের ভিতর পা মালিস করানোর অভিযোগ ওঠে। সেই সংক্রান্ত একটা ভিডিয়োও প্রকাশ্যে আসে। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে অবশ্যে সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করা হয়নি। পা মালিশ করা নিয়ে আপের ব্যাখ্যা ছিল যে, সত্যেন্দ্র অসুস্থ, তাই তাঁকে ফিজ়িওথেরাপি করা হচ্ছিল।
অন্যদিকে গত বছর জন্মাষ্টমীর সকালে সিসৌদিয়ার বাড়ি-সহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল সিবিআই। প্রায় ১৪ ঘণ্টা ধরে দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিল। এর পর তাঁর ব্যাঙ্ক লকারও খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। গত অগস্টেই সিসৌদিয়া এবং আরও ১৪ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। সত্যেন্দ্রর গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুলে এর নেপথ্যে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতিকে দেখেছিলেন কেজরীওয়াল। মণীশের গ্রেফতারির পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য না পাওয়া গেলেও আপ গণতন্ত্রের কালো দিন বলে মোদী সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে।