উপগ্রহচিত্রে নির্মীয়মাণ চিনা সেতু। ছবি: ম্যাক্সার।
অভিযোগ উঠেছিল আগেই। এ বার উপগ্রহচিত্রে তার প্রমাণও মিলল। প্যাংগং হ্রদের উত্তর এবং দক্ষিণ তীরের একাংশকে জুড়ে চিনা ফৌজের নির্মীয়মাণ সেতুর ছবি সামনে আসতেই নতুন করে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, লাদাখে জবরদখল করা জমিতে ওই সেতু বানাতে পারলে প্যাংগং হ্রদের উত্তর এবং দক্ষিণপ্রাপ্তে কৌশলগত ভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাবে চিনা সেনা।
গত ১৬ জানুয়ারি তোলা ওই উপগ্রহচিত্রে দেখা যাচ্ছে, লাদাখের দুর্গম এলাকায় সেতু নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভারী ক্রেন-সহ নানা সরঞ্জাম মজুত করেছে চিনা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। প্রকাশিত খবরে দাবি, প্যাংগং হ্রদের একাংশের উপর ৪০০ মিটার দীর্ঘ এবং ৮ মিটার চওড়া সেতুটি নির্মাণের কাজ শীতের মধ্যেই শেষ করার জন্য তৎপরতা চলছে পুরোদমে।
প্যাংগং হ্রদের উত্তরপ্রান্তে চিনা সেনার একটি হাসপাতালের অদূরে তৈরি সেতুটি জুড়েছে দক্ষিণ তীরের একটি অংশকে। দক্ষিণ তীরের ওই অংশেই ২০২০-২১ সালে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল ভারতীয় এবং চিনা সেনা। ভবিষ্যতে ফের এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) লাগোয়া বিস্তীর্ণ অংশে ওই সেতুর মাধ্যমে দ্রুত সেনা, অস্ত্র এবং রসদ পাঠাতে পারবে পিএলএ। কারণ, সেতু তৈরি হয়ে গেলে প্যাংগংয়ের ওই দুই প্রান্তে চিনা সেনাশিবিরের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার থেকে কমে দাঁড়াবে ৫০ কিলোমিটার।
চলতি বছরের গোড়াতেই নয়াদিল্লির তরফে প্যাংগং হ্রদের উপর চিনা সেনার সেতু বানানোর কথা স্বীকার করা হয়েছিল। তবে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীর ‘সাফাই’, ২০২০ সালের গালওয়ান-কাণ্ডের সময় প্যাংগং হ্রদের ওই জমি চিনের দখলে যায়নি। গিয়েছিল ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘দখল করা এলাকায় প্রায় ৬০ বছর আগে থেকেই পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করে চিন।’’
২০২০-র এপ্রিলে প্যাংগং হ্রদের উত্তরে ফিঙ্গার এরিয়া-৮ থেকে অনুপ্রবেশ করে চিনা ফৌজ। চলে আসে ফিঙ্গার এরিয়া-৪-এর কাছে। জুন মাসে গালওয়ান উপত্যতায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে নতুন করে দ্বিপাক্ষিক শান্তি আলোচনা শুরু হয়। তারই মধ্যে হ্রদের দক্ষিণে হেলমেট টপ থেকে রেচিন লা বেশ কিছু উঁচু এলাকায় দখল নেয় ভারতীয় সেনার ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর’। দফায় দফায় আলোচনার পরে ফেব্রুয়ারিতে দু’পক্ষের সেনাই মুখোমুখি অবস্থান থেকে কিছুটা পিছিয়ে যায়। এ বার সেই এলাকাতেই নতুন করে সামরিক পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে চিন।