এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
আমেরিকার নির্বাচনী পালাবদলের ঘোষণার পর নয়াদিল্লি তার চিরাচরিত ভারসাম্যের কূটনীতিতেই বহাল থাকল। মুম্বইয়ে আজ একাধিক অনুষ্ঠানে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য-সম্পর্ক আরও গভীর করার বার্তা দিয়ে বলেছেন, বিশ্ব ক্রমশ বহুপাক্ষিকতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত। সেই আমেরিকার নতুন জমানার প্রতি সদর্থক বার্তা দিয়ে জয়শঙ্করের বক্তব্য, ‘‘নানা দেশ আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু আমরা নই।’’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বে ফিরে এসেছে ঠান্ডা যুদ্ধের পরিস্থিতি। যার জেরে আমেরিকা এবং রাশিয়া ফের যুদ্ধং দেহি ভূমিকায় আন্তর্জাতিক আসরে অবতীর্ণ। মস্কোয় বৈদ্যুতিন, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিমান সংক্রান্ত পণ্য সরবরাহ করার জন্য ১৮টি ভারতীয় সংস্থাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আমেরিকা। আমেরিকার দাবি, ওই সংস্থাগুলি ভারতের দেশীয় আইন ভঙ্গ করেছে। কিন্তু নয়াদিল্লি তা মানতে নারাজ। পাশাপাশি ওয়াশিংটনের রক্তচক্ষু অগ্রাহ্য করেই মস্কো থেকে অশোধিত তেল আমদানি করছে নয়াদিল্লি।
তবে আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চেয়ে আগামী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক তুলনায় ভাল। এই পরিস্থিতিতে আজ মুম্বইয়ে ভারত-রাশিয়া বাণিজ্য মঞ্চের বক্তৃতায় জয়শঙ্কর নয়াদিল্লি ও মস্কোর মধ্যে অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাড়ানোর দিকেই জোর দেন। ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ৬৬ বিলিয়ন থেকে ১০০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার কথা বলেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মস্কোর দিকে হেলে থাকার বিষয়টি দ্রুত সংশোধন করতে হবে বলেও জানান। গত এপ্রিল থেকে অগস্ট পর্যন্ত ভারত যে মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে রাশিয়ায়, আমদানি করেছে প্রায় তার তেরো গুণ। বিশেষ করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারত বিপুল পরিমাণ তেল এনেছে রাশিয়া থেকে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আরও নষ্ট করেছে।
জয়শঙ্করের বক্তব্য, কেবল লেনদেনের কূটনীতি নয়। বরং রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সম্পর্ক গড়ে তোলাই সাউথ ব্লকের লক্ষ্য। তিনি জানান, দুই দেশই তেল, গ্যাস, কয়লা এবং ইউরেনিয়ামের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে চাইছে। তাঁর মতে, এই সম্পদগুলি ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই রাশিয়াও ভারতে তার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদের নির্ভরযোগ্য বাজার পেতে পারে।
প্রসঙ্গত ট্রাম্প জেতার পর নয়াদিল্লি আজ স্পষ্ট করে বলতে চেয়েছে যে, অদূর ভবিষ্যতে রাশিয়াকে ব্রাত্য করার প্রশ্নই নেই। বরং সহযোগিতা আরও বাড়াবে ভারত। উল্লেখ্য, গত ৬ নভেম্বর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার পরই ‘বন্ধু’ ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সমাজমাধ্যমে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর কিছু পুরনো ছবি পোস্ট করে মোদী লিখেছিলেন, ‘‘চলুন একসঙ্গে কাজ করি!’’
সেই সূত্র ধরে মুম্বইয়ে অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘যখন বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখনও মোদীর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। তার পর ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলেন। তারও পরে এলেন বাইডেন। জয়ের পর ট্রাম্পের পাওয়া প্রথম তিনটি ফোন কলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শুভেচ্ছাবার্তা ছিল। তিনি সহজ-স্বাভাবিক ভাবেই এই সুসম্পর্কগুলি গড়ে তোলেন।’’ জয়শঙ্করের দাবি, অন্য দেশগুলি আমেরিকার নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও, ভারত একেবারেই চিন্তিত নয়। বর্তমানে ভারতের বিদেশনীতির মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক নীতির উপর জোর দেওয়া। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রকল্পেরও প্রশংসা করেছেন বিদেশমন্ত্রী।