মঙ্গলবার লোকসভায় বিবৃতি দিচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: পিটিআই।
চিনের সঙ্গে সম্প্রতি ভারতের সম্পর্কের ‘উন্নতি’ হয়েছে। মঙ্গলবার লোকসভায় দাঁড়িয়ে এমনটাই দাবি করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ২০২০ সালের এপ্রিলে গালওয়ানে দুই দেশের সেনার সংঘাতের পর থেকে ক্রমাগত কূটনৈতিক আলোচনার কারণেই পরিস্থিতি বদলেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
২০২০ সালের জুনে দুই দেশের সেনার মুখোমুখি সংঘর্ষের পর থেকে চাপানউতর চলছে। গত অক্টোবরে রাশিয়ার কাজ়ানে ব্রিক্স শীর্ষ সম্মেলনের সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকে সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছয় দুই দেশ। এর পরে মঙ্গলবার বিদেশমন্ত্রী দুই দেশের এখনকার সম্পর্ক নিয়ে বিবৃতি দিলেন লোকসভায়। তিনি বলেন, ‘‘২০২০ সাল থেকে আমাদের (ভারত ও চিন) সম্পর্ক টালমাটাল হয়েছিল। চিনের কার্যকলাপের কারণে সীমান্ত এলাকায় শান্তি এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। সেই থেকে আমরা ক্রমাগত কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে গিয়েছি, যার ফলে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে।’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন, সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য চিনের সঙ্গে কথা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর ভারত। ‘স্বচ্ছ এবং দুই দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য’ কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করার দিকেই নজর রয়েছে সরকারের।
জয়শঙ্করের মুখে ২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ানে সংঘাতের কথাও উঠে এসেছে লোকসভায়। তিনি জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণরেখায় তার আগের ৪৫ বছরে যা হয়নি, ২০২০ সালের জুন মাসে তা-ই হয়েছে। সেখানে চিনের হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিক স্তরেও আলোচনা চালিয়ে গিয়েছে ভারত। বিদেশমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে ভারত এবং চিনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে অতীতে হওয়া চুক্তির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, অতীতে ১৯৯১, ১৯৯৩, ১৯৯৬, ২০০৩, ২০০৫, ২০১২ এবং তার পরে ২০১৩ সালে শেষ বার সীমান্তে প্রতিরক্ষা বিষয়ে সমঝোতা করে ভারত এবং চিনের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। কেন সেই চুক্তির কথা মনে করালেন, তা-ও জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। তাঁর কথায়, ‘‘এই চুক্তিগুলির কথা মনে করিয়ে আসলে দুই দেশের সম্পর্কে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ফেরানোর বিষয়ে আমাদের সদিচ্ছার কথা বোঝাতে চাইছি।’’
অক্টোবরে মোদী এবং জিনপিং সীমান্ত থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে ঐকমত্য হন। চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশই দেপসাং, ডেমচক এলাকা থেকে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। শুধু তা-ই নয়, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চার বছরে যে সব অস্থায়ী সেনাছাউনি তৈরি হয়েছিল ওই এলাকায়, তা-ও সরিয়ে ফেলার কথা হয়। স্থির হয়, আগের মতোই দু’দেশের সেনা টহল দেবে গালওয়ান সীমান্তে। সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে যায়। এর পরে গত নভেম্বরে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে জি২০ সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে মুখোমুখি বসেন জয়শঙ্কর এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা মেটার পর সেটিই ছিল দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীর প্রথম বৈঠক। সেখানে সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অঞ্চল থেকে সেনা সরানোর বিষয়ে কথা হয় দু’জনের। বৈঠকের পর জয়শঙ্কর জানান, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কী ভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়েও কথা হয়েছে তাঁদের। একই ইঙ্গিত দেন চিনা বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র। এর মাঝেই অক্টোবরের শেষে দীপাবলিতে দুই দেশের বাহিনী সীমান্তে মিষ্টি বিনিময় করেছিল। এ বার লোকসভায় জয়শঙ্কর জানালেন, সম্প্রতি চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে উন্নতি হয়েছে।