ছেঁড়া জিন্স নিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনায় জয়া বচ্চন।
পোশাক দেখে একজন মহিলার চরিত্রের বিচার করা মুখ্যমন্ত্রীকে মানায় না। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তীর্থ সিংহ রাওয়াতের ‘ছেঁড়া জিন্স’ মন্তব্য প্রসঙ্গে বললেন অভিনেত্রী-সাংসদ জয়া বচ্চন। জয়ার কথায়, ‘‘এই ধরনের মনোভাবই মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ মূলক আচরণের সাহস জোগায় অপরাধীদের। তাই প্রশাসনের শীর্ষপদে থাকা একজন জন প্রতিনিধির এই ধরনের মন্তব্য করার আগে দু’বার ভাবা উচিত।’’
মহিলাদের ছেঁড়া জিন্স নিয়ে উত্তরাখণ্ডের নতুন মুখ্যমন্ত্রী তীর্থ সিং-এর মন্তব্য নিয়ে বুধবার রাত থেকেই সরব নেটাগরিকরা। টুইটারে হু হু করে ছড়িয়েছে ছেঁড়া জিন্সের ছবি। জিন্স যত মলিন, যত দুর্দশাগ্রস্ত, ফাটাছেঁড়া, শরীর দেখানো, তত যেন তার কদর। কারণ ততটাই জোরালো সেই জিন্সের প্রতিবাদের ভাষা।
মহিলাদের ছেঁড়া জিন্স পড়ার প্রবণতাকে কটাক্ষ করে মঙ্গলবার বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন তীর্থ সিংহ। ‘কাঁচিতে আমাদের সংস্কৃতিও কাটছে’ বলে ছেঁড়া জিন্স পরে নগ্ন হাঁটু প্রদর্শনের সমালোচনা করেছিলেন তিনি। মন্ত্রীর সেই আপত্তির জবাব দিতে নেটমাধ্যমকেই বেছেন নেন দেশবাসী। একের পর এক ছেঁড়া জিন্স পরা হাঁটু দেখানো ছবিতে ভরিয়ে দেন টুইটার। ট্রেন্ডিং তালিকার শীর্ষে চলে আসে হ্যাশট্যাগ রিপড জিন্স টুইটার। স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, মলিনতা ছেঁড়া জিন্সে নয়, আসল মালিন্য মনে। যিনি দেখছেন, তাঁরই দৃষ্টিভঙ্গিতে।
মঙ্গলবার উত্তরাখণ্ডের একটি সরকারি অনুষ্ঠানে এ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন তীর্থ। দেহরাদুনে শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের অনুষ্ঠান ছিল। তীর্থ সেখানেই তাঁর সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার কথা জানান। কিছুদিন আগেই বিমানসফরে এক মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয় মুখ্যমন্ত্রীর। দুই সন্তানের মা ওই মহিলা ছেঁড়া-ফাটা জিন্স পরেছিলেন। কৌতূহলী মন্ত্রী ওই মহিলাকে তাঁর পেশার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। জবাবে ওই মহিলা তাঁকে জানান, তিনি একটি সেচ্ছাসেবী সংস্থা চালান। ঘটনাটির উল্লেখ করে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই ধরনের মহিলা যদি সমাজে বেরোন এবং মানুষের কাছে তাঁদের সমস্যার কথা জানতে যান, তবে সমাজকে এঁরা কী শিক্ষা দেবেন? কী উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করবেন সমাজের সামনে? নিজের সন্তান বা আগামী প্রজন্মকেই বা কী শিক্ষা দেবেন?’’ মন্ত্রীর এই মন্তব্যের জবাবেই দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ছেঁড়া জিন্স পরা ছবি দিয়েই মন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান মহিলারা। মন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয় নানা ব্যঙ্গচিত্রও।
ছেঁড়া জিন্সে নগ্ন হাঁটু প্রদর্শনে ভারতীয় সংস্কৃতির অপলাপ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিলেন মন্ত্রী। ‘‘কাঁচিতে তো সংস্কৃতিও কাটছে’’ বলে উক্তি করেন তিনি। তারই প্রতিক্রিয়ায় অভিনেত্রী এবং রাজ্যসভার সাংসদ জয়া বচ্চন বলেন, ‘‘আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে একজন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আপনি এমন মন্তব্য করেন কী করে? পোশাক দেখে আপনি বিচার করবেন কে সংস্কৃতিবান আর কে অপসংস্কৃতির শিকার? আপনাদের এই মনোভাবের কারণেই দেশে মহিলাদের অপমান করতে, তাদের সঙ্গে অপরাধমূলক আচরণ করতে সাহস পায় অপরাধীরা।’’
মন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান কংগ্রেসের নেতা সঞ্জয় ঝা-ও। টুইটারে ছেঁড়া জিন্স পরা নিজের ছবি দিয়ে লেখেন, ‘যা বুঝছি ছেঁড়া জিনস আমাদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করে। সমাজকে ধসিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী অন্তত তা-ই মনে করেন। আপনাদের কী মনে হয়?’’
বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। ছেঁড়া জিন্স পরতে বহুবার দেখা গিয়েছে তাঁকেও। বিজেপি-র এক মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে কঙ্গনার ছেঁড়া জিন্স পড়া ছবি দিয়ে সমালোচনা করেছিলেন কেউ কেউ। জবাব দেন কঙ্গনাও। তবে দু’দিক বাঁচিয়ে। কঙ্গনা টুইটারে লেখেন, ‘ছেঁড়া জিন্স ভাল ভাবেও পরা যায়। তবে ইদানিং সবাই যেভাবে পড়ছে, তাতে সত্যিই সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে।’
উত্তরাখণ্ডের মন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে গুল পনাগ, প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীরাও ছেঁড়া জিন্স পরা ছবি দেন টুইটারে। এমনকি হাঁটু প্রদর্শন প্রসঙ্গে ছেঁড়া জিনসের পাশে আরএসএসের হাফপ্যান্ট পরা ছবি দিয়েও তৈরি হয় ব্যঙ্গচিত্র। তীর্থ নিজেও আরএসএসের সংগঠক ছিলেন এক সময়ে। নেটাগরিকরা সেই প্রসঙ্গ টেনেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি তাঁকে।