অস্ট্রেলিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস। ছবি: রয়টার্স।
ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চিনই সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ বলে মন্তব্য করলেন অস্ট্রেলিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস।
ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা থেকে বাণিজ্যিক সমঝোতা, সব ক্ষেত্রেই পারস্পরিক বোঝাপড়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আজ ‘টু প্লাস টু’ কাঠামোয় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী তথা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস ও বিদেশমন্ত্রী পেনি উয়ংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পরে মার্লেস বলেন, ‘‘আমাদের দুই দেশেরই সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চিন। আবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ চিন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের দু’দেশেরই কাছে একটি মহাসাগর। সে অর্থে আমরা প্রতিবেশী। এখন দুই দেশের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।’’ দিল্লিতে দাঁড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সরাসরি চিন সম্পর্কে এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত কূটনীতিকদের। সূত্রের খবর, বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের পাশাপাশি কথা হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিষয় নিয়েও। আলোচনায় উঠে এসেছে ইজ়রায়েল–হামাস যুদ্ধ এবং পশ্চিম এশিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি।
ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা এবং রণকৌশলগত বোঝাপড়া ইতিমধ্যেই রয়েছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কথা মাথায় রেখে সেই বোঝাপড়ার সীমা আরও প্রসারিত করা হবে বলেই সিদ্ধান্ত হয়েছে আজ। সমুদ্রপথে চিনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্যের মোকাবিলা করতে যেমন আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের চতুর্দেশীয় অক্ষ বা কোয়াড সক্রিয়, তেমনই পৃথক ভাবে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়াও এই ব্যাপারে জোট বেঁধেছে।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া উভয় রাষ্ট্রই সমুদ্রপথে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানেজ় নিজেও বলেছেন সমুদ্রপথে সহযোগিতার যথেষ্ট প্রয়োজন ও গুরুত্ব রয়েছে। দু’দেশের মধ্যে মালাবার নৌ-মহড়া অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে দু’দেশের নৌসেনার শীর্ষ স্তরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আদানপ্রদান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
ছ'মাস আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিডনি সফরে গিয়ে চিন-বিরোধিতার প্রশ্নে রণকৌশলগত সম্পর্ক পোক্ত করা নিয়ে অ্যান্টনি অ্যালবানেজ়-এর সঙ্গে দৌত্য করেছেন। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মোদী সে দিন বলেছিলেন, “ক্রিকেটের পরিভাষায় বলা যায়, ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক টি-টোয়েন্টি মোড়ে পৌঁছে গিয়েছে।’’ এ দিন দুই দেশের চার শীর্ষ পর্যায়ের নেতার বৈঠকেও ছায়া ফেলেছে ক্রিকেট। গত কালই ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আজ বৈঠকে বসার আগে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করকে বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের ক্রিকেটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সই করা জার্সি উপহার দেন অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস। মার্লেস বলেন, ‘‘ম্যাক্সওয়েলের স্বাক্ষর করা জার্সি ওঁকে দিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।’’