India

নতুন বছরে ভারসাম্যের বিদেশনীতিই চ্যালেঞ্জ

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, বর্তমান ভূকৌশলগত রাজনীতিতে পরস্পর যুযুধান দু’টি মেরুর মধ্যে ২০২২ সালে মোদী সরকার যে সফল ভারসাম্যের নীতি নিয়ে চলতে পেরেছে, তার এক প্রতীকী ছবি এটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৫৪
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মা হীরাবেনের মৃত্যুর পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, একের পর এক রাষ্ট্রনেতার শোকবার্তা এসেছে। অন্য দিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টুইট করে বর্ষশেষে আরও এক বার ভারতের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, “বাণিজ্য, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, শক্তি ও কৌশলগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়িয়ে চলেছে দুই দেশ। যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলি সমাধানের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে।”

Advertisement

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, বর্তমান ভূকৌশলগত রাজনীতিতে পরস্পর যুযুধান দু’টি মেরুর মধ্যে ২০২২ সালে মোদী সরকার যে সফল ভারসাম্যের নীতি নিয়ে চলতে পেরেছে, তার এক প্রতীকী ছবি এটি। ভিন্ন প্রসঙ্গে হলেও, বর্ষশেষে বাইডেনের সহমর্মিতা এবং পুতিনের প্রশংসা জুটেছে মোদীর। বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে এমনটা নিঃসন্দেহে বিরল। কিন্তু একই সঙ্গে নতুন বছরের বিদেশনীতিতে ভারতের কাছে এই ভারসাম্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের সঙ্গে সংঘাতকে সামলানোটাও বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে উঠে আসতে চলেছে ২০২৩-এ।

ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পরেই আলোচনা শুরু হয়েছিল, ক্রমশ চাপ বাড়ানো পশ্চিম এবং আগ্রাসী রাশিয়ার সঙ্গে একই সঙ্গে কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক সংযোগ ভারত কী ভাবে রেখে চলবে। কিন্তু দেখা গেল, রাশিয়ার উপরে পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও নয়াদিল্লি সে দেশ থেকে অশোধিত তেল আমদানি বাড়িয়েছে। অন্য দিকে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং আমেরিকার সঙ্গে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকেন্দ্রিক কৌশলগত সংযোগে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে। হয়ে উঠেছে চতুর্দেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’-এর অন্যতম মুখ।

Advertisement

কিন্তু যত সময় যাচ্ছে, ভারতের উপর বিশ্বের একটি বড় অংশের চাপ বাড়ছে রাশিয়ার উপর নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে এই যুদ্ধ বন্ধে আরও ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে এসসিও সম্মেলনে পুতিনকে মোদী বলেছেন, এই সময় যুদ্ধের নয়। কিন্তু কথাকে কাজে পরিণত করতে এ বার ভারত ঐকান্তিক হোক, এটাই চাইছে গোটা পশ্চিম বিশ্ব এবং ইউক্রেন।

সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসি়ডেন্ট মোদীকে ফোন করে এই একই কথা বলেছেন বলে সূত্রের খবর। জি ২০-র প্রেসিডেন্ট (এই বছরের) হিসাবে ভারতকে বারবার বিভিন্ন সম্মেলনে এই প্রসঙ্গটির মুখোমুখি হতে হবে গোটা ২০২৩ সাল জুড়ে।

কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, গোটা বিশ্বই ভারতের আন্তর্জাতিক ভূমিকাকে ক্রমশ অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তার কারণ, কোভিডের সময় থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সঙ্কটে নিজের ভূমিকাকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে বহুপাক্ষিক জোটে আগ্রহী হচ্ছে, সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ভারত তার প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদকে কাজে লাগিয়ে বহুপাক্ষিকতার সংস্কার, সমুদ্র নিরাপত্তা বাড়ানো, সন্ত্রাস বিরোধিতাকে ঢেলে সাজানোর উপরে জোর দিয়েছে। এই বিষয়গুলি শুধু মাত্র ভারতের নয়, আন্তর্জাতিক স্বার্থের সঙ্গেও জড়িত বটে। স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্বের নজর থাকবে, জি-২০-র এই প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদে ভারত তার দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলিকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তার দিকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement