Padma Award

Padma award: স্বীকৃতি যখন এল, মুছে গিয়েছে সমস্ত স্মৃতি

শকুন্তলাদেবীকে মাথায় রেখে কস্তুরবা আশ্রমের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁর অনুগামী মেয়েরা। 

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৫২
Share:

শকুন্তলা চৌধুরী এবং মুক্তামণি দেবী।

গুয়াহাটির শরণিয়া এলাকার কস্তুরবা আশ্রমে এ বারের প্রজাতন্ত্র দিবস আরও বিশেষ, আরও উৎসবের।

Advertisement

কারণ সেখানকার শতক পেরনো সমাজসেবী শকুন্তলা চৌধুরীর নাম গত কালই পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্য ঘোষিত হয়েছে। তবে সহকর্মীদের কাছ থেকে সেই খবর পেয়েও ১০২ বছরের শকুন্তলাদেবীর মধ্যে কোনও ভাবান্তর নেই। বছর কয়েক আগেই তিনি স্মৃতি হারিয়েছেন।

নারীদের স্বয়ম্ভরে বহু বছর ধরে কাজ করছেন শকুন্তলাদেবী। বহু অসহায় দরিদ্র মেয়ের কাছে তিনি আশ্রয়। আশ্রমিকদের আফশোস, যে বিপুল কাজ তিনি করেছেন সময়ে তার যোগ্য স্বীকৃতি পাননি শকুন্তলাদেবী। যখন তা পেলেন, তত দিনে পুরস্কারের গুরুত্ব বোঝার ক্ষমতা তিনি হারিয়েছেন। তবে শকুন্তলাদেবীকে মাথায় রেখে কস্তুরবা আশ্রমের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁর অনুগামী মেয়েরা।

Advertisement

১৯৩৪ সালে দ্বিতীয় অসম সফরের সময়ে মোহনদাস গান্ধী পানবাজারে হরিকৃষ্ণ দাসের কাছে আতিথ্য নেন। তাঁর স্ত্রী হেমপ্রভা ও মেয়ে অমলপ্রভা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। গাঁধীর কাছ থেকে সেবাগ্রামে তাঁত বোনা শিখে ফিরে অমলপ্রভা অসমে তাঁত শিল্পের প্রসারে কাজ করছিলেন। ১৯৪৪ সালে কস্তুরবা গান্ধীর প্রয়াণের পরে ‘কস্তুরবা গান্ধী ন্যাশনাল মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন মদনমোহন মালবীয়। গোটা দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয় ৭৫ লক্ষ টাকা। অসমের মানুষ মোট ১,৪৪,০৫২ টাকা তুলে দিয়েছিলেন ওই তহবিলে। ১৯৪৫ সালে স্ত্রীর মৃত্যুর পরে হরিকৃষ্ণ শরণিয়া পাহাড়ের কোলে তাঁর বাড়ি ও মোট ৫৪ বিঘা কস্তুরবা গান্ধী ট্রাস্টকে দান করেন। সেখানে আশ্রম তৈরিতে প্রধান উদ্যোগ নিয়েছিলেন অসমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ ও অমলপ্রভা। ১৯৪৬ সালের ৯ জানুয়ারি অসম সফরে এসে গান্ধী নিজে কস্তুরবা আশ্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। তাঁর বাস করা ‘গান্ধী ঘর’ এখনও টিকে আছে। যে গাছের তলায় বসে তিনি তাঁত বুনেছিলেন, সেই নিম গাছটিও এখনও দিব্য রয়েছে।

১৯১৯ সালে জন্মগ্রহণ করা শকুন্তলাদেবী ১৯৪৭ সালে আশ্রমে যোগ দিয়েছিলেন। আশ্রম তৈরির সময় গান্ধীর ঠিক করে দেওয়া দিনলিপি এখনও পালিত হয়। শকুন্তলাদেবীরা আজও শুধুই হাতে বোনা খাদির শাড়ি-মেখেলা পরেন।

এ বছর উত্তর-পূর্ব থেকে যে দশ জন পদ্ম সম্মান পেলেন, তাঁদের মধ্যে শকুন্তলাদেবী-সহ ৪ জন মহিলা আছেন। পদ্মশ্রী প্রাপ্ত মণিপুরের ৭৭ বছর বয়সী অ্যাপ্লিক শিল্পী লৌরেমবাম বিনো দেবী বিভিন্ন আকারের কাঁচির সাহায্যে নানা নকশায় কাপড় কেটে তৈরি ‘লিবা’ নামে বিশেষ একটি বয়নশিল্পকে পাঁচ দশক ধরে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ১৭ বছর বয়সে শাশুড়িকে দেখেই কাঁচির জাদু ও সূচের এই নকশা ফুটিয়ে তোলার কাজ শুরু করেছিলেন বিনো।

৪৯ বছরের মুক্তামণি দেবী এক সময়ে চাষবাষ করে সংসার চালাতেন। মেয়েকে জুতো কিনে দেওয়ার টাকা ছিল না। তাই নিজে হাতে পশমের জুতো তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই জুতো দেখে মুগ্ধ হন স্কুলের শিক্ষিকা। নিজের মেয়ের জন্যেও ওই ধরনের জুতো কিনতে চান। সেই ঘটনা মোড় ঘুরিয়ে দেয় মুক্তার সংসারে। ১৯৯০ সালে তিনি ‘মুক্তা শু’জ়’ পত্তন করেন। তার পর থেকে প্রায় হাজার জনকে জুতো-ব্যাগ বোনায় প্রশিক্ষণ দিয়েছেন মুক্তা। তাঁর তৈরি জুতো ২০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। রফতানি হয় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, মেক্সিকো এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। সেই সূত্রেই মিলল পদ্ম সম্মান। মেঘালয়ের শিক্ষাবিদ ৬০ বছরের বাদাপলিন ওয়ার-ও খাসি ভাষার প্রচার ও প্রসারে অবদানের জন্য পদ্মশ্রী পেলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement