রতন টাটা। —ফাইল চিত্র।
শিল্পপতি রতন নভল টাটার শখ ছিল বিমান ওড়ানো। লাইসেন্সধারী বিমানচালক ছিলেন তিনি। এফ-১৬, এফ-১৮-এর মতো শক্তিশালী যুদ্ধবিমান অনায়াসে উড়িয়েছেন। প্রায়ই তাঁকে নিজের সংস্থার জেট বিমান ওড়াতেও দেখা যেত। বিমান ওড়াতে গিয়ে এক বার প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন টাটা। সময়টা ১৯৬০ এর দশক। রতন নভল টাটা তখন আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। বিমান চালানোর নেশাটা তখন থেকেই ছিল তাঁর। এক দিন এক সহপাঠীকে নিয়ে চেপে বসলেন এক ইঞ্জিনের একটি ছোট বিমানে। বিমান যখন মাঝ-আকাশে, আচমকা ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেল। মাঝ-আকাশে থরথর করে বিমান কাঁপছে। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি সামলে নিয়ে নিরাপদে ইথাকা টম্পকিনস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলেন টাটা। ২০০৯ সালে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে টাটার সহপাঠীর তৈরি করা তথ্যচিত্রে নিজেই সেই রোমহর্ষক কাহিনী শুনিয়েছিলেন শিল্পপতি। তাঁর কথায়, ‘‘গোটা বিমানটা থরথর করে কাঁপছিল। বুঝতে পারলাম ইঞ্জিন কাজ করছে না।...হয়তো সেটাই আমার জীবনের সেরা ল্যান্ডিং ছিল।’’
গতকাল মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন সেই অকুতোভয় মানুষটি। জীবনের অর্ধেক আকাশ পার করেও তাঁর বিমান ওড়ানোর শখ ছিল অমলিন। ২০০৭ সালে ৬৯ বছর বয়সে বেঙ্গালুরুতে একটি বিমান মহড়ায় এফ-১৬ যুদ্ধবিমান উড়িয়েছিলেন তিনি। আমেরিকার প্রখ্যাত যুদ্ধবিমান নির্মাতা সংস্থা মার্টিন লকহিডের আমন্ত্রণে আধ ঘণ্টার সেই উড়ানের অভিজ্ঞতা পরে ভাগ করে নিয়েছিলেন এক সাক্ষাৎকারে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘উঁচু দিয়ে উড়েছি। উড়েছি নীচু দিয়েও। মাটি থেকে মাত্র ৫০০ ফুট উঁচু দিয়ে বিমান ওড়ানোর সেই অভিজ্ঞতা দারুণ ছিল। আবার এমন অভিজ্ঞতা হলে মন্দ হয় না।’’
বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। এর পর ওড়ালেন আরও শক্তিশালী আমেরিকান নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমান এফ/এ-১৮ সুপার হরনেট। আকাশ আর উড়ানের প্রতি এই আজন্ম প্রেম থেকেই ১৯৬৫ সালে জামশেদপুরে স্থাপন করলেন জামশেদপুর কোঅপারেটিভ ফ্লাইং ক্লাব। সেখান থেকে বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ পেয়ে সফল বিমানচালক হয়েছেন অনেকেই। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া ভিস্তারা এয়ারলাইনটি চালু করেছিল টাটাগোষ্ঠীই। শুধু তাই নয়, সরকার অধিগ্রহণ করার আগে ১৯৩২ সালে এয়ার ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংস্থার হাত ধরে। ২০২১ সালে নিলামে সর্বোচ্চ দর হেঁকে এয়ার ইন্ডিয়া ফের কিনে নেয় টাটা গোষ্ঠী। ২০২২ সালে পাকাপাকি ভাবে এয়ার ইন্ডিয়া টাটা গোষ্ঠীর হাতে আসে। সংবাদ সংস্থা