রাজ্যসভায় তিন তালাক বিল পাশ হওয়ার পরই উচ্ছ্বাস। বারণসীতে। ছবি: পিটিআই।
কেউ নাম করলেন না। কিন্তু লক্ষ্য কে, তা বুঝতে বাকি রইল না। আজ রাজ্যসভায় তিন তালাক বিল নিয়ে বিতর্কে কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘‘প্রধান সেবককে কি বলবেন, যাতে প্রধান সেবিকাকেও ন্যায় পাইয়ে দেন তিনি?’’
নিজেকে প্রধান সেবক আখ্যা দেওয়া নরেন্দ্র মোদীর সরকার দাবি করছে, মুসলিম মহিলাদের ন্যায় দিতেই তিন তালাক আইন। এতে কোনও মুসলিম স্বামী তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিলে তাঁকে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এসপি-র জাভেদ আলি খানের প্রশ্ন, কোনও হিন্দু স্বামী বিবাহবিচ্ছেদ না-দিয়েই স্ত্রীকে পরিত্যাগ করলে, তাঁকে শাস্তি দিতে সরকার কি আইন আনবে? আরএসএসের দিকে ইঙ্গিত করে তৃণমূলের দোলা সেনের কটাক্ষ, ‘‘একটি সংগঠনের প্রধান ২০১৩-তে বলেছিলেন, যদি স্ত্রী নিজের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তা হলে তাঁকে পরিত্যাগ করা যেতে পারে।’’
এই সব খোঁচা সত্ত্বেও বিরোধীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের জেরে আজ রাজ্যসভায় বিলটি পাশ করিয়ে নিয়েছে কেন্দ্র। জোটসঙ্গী জেডিইউ, এমনকি বিজেপির অন্তত ১০ জন সাংসদ না থাকা সত্ত্বেও। ভোটাভুটিতে বিএসপি, এডিএমকে, টিআরএস, টিডিপি, পিডিপি-র অনুপস্থিতির জেরে। কংগ্রেস, তৃণমূল, বামেরা দাবি তুলেছিল, বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক। কিন্তু ভোটাভুটিতে সেই দাবিও খারিজ হয়ে যায়।
সরকারের পক্ষে ৯৯
সরকারের বিপক্ষে ৮৪
যাদের গরহাজিরায় সুবিধা হল সরকারের
• বিএসপি ৪
• জেডিইউ ৬
• এডিএমকে ১১
• তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি ২
• টিডিপি ২
• পিডিপি ২
বিল পাশের পরে মোদী টুইট করেন, ‘অবশেষে মধ্যযুগীয় একটা প্রথাকে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলা গেল। তিন তালাকে ভুক্তভোগী সেই সব সাহসী মহিলাদের সেলাম।’
বিএসপি সাংসদ সতীশচন্দ্র মিশ্র বিতর্কের সময় বিলের কড়া বিরোধিতা করেন। কিন্তু ভোটের সময় দেখা যায়, দলের চার সাংসদই নেই। মায়াবতী এসপি-র সঙ্গে আর গাঁটছড়া বাঁধবেন না বলে ঘোষণা করার পরেই প্রশ্ন উঠেছিল, তিনি কি বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন? সম্প্রতি আয়কর দফতর মায়ার ভাইয়ের ৪০০ কোটি টাকার বেনামি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। তার পর এই ঘটনা বিজেপি-বহেনজি রসায়ন নিয়ে নতুন জল্পনার জন্ম দিয়েছে। এনসিপি, এসপি বিরুদ্ধে ভোট দিলেও এনসিপি-র ৪ সাংসদের মধ্যে শরদ পওয়ার, প্রফুল্ল পটেল গরহাজির ছিলেন। এসপি-র ১২ জনের মধ্যে ৭ জন ছিলেন না। কংগ্রেসের ৪৮ জনের মধ্যে ৪ জন অনুপস্থিত ছিলেন। এক জন এ দিনই পদত্যাগ করেন। এঁরা হাজির থাকলে সরকার হেরে যেত।
তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ তকমা দিয়ে তিন বছরের জেল নিয়েই বিরোধীদের প্রধান আপত্তি। রবিশঙ্করের যুক্তি, জেলের ভয় থাকলে কেউ তিন তালাক দেবেন না। সুপ্রিম কোর্ট বেআইনি বলার পরেও তিনশোর বেশি তিন তালাকের ঘটনা ঘটেছে। তাই এই আইন। রবিশঙ্করের যুক্তি ছিল, সিরিয়া, জর্ডনের মতো ইসলামি রাষ্ট্রেও তিন তালাক আইনত নিষিদ্ধ। কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ পাল্টা বলেন, ‘‘ওই সব দেশের মতো ভারতেও কি হাত কেটে দেওয়া, গর্দান নেওয়ার মতো আইন চালু হবে!’’
মুসলিম মহিলাদের অধিকার রক্ষায় তৈরি ‘জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি’ অবশ্য এই বিল পাশকে নিজেদের আন্দোলনের জয় বলেই মনে করছে।