প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ছবি: পিটিআই
জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরিতে জঙ্গি-দমন অভিযানের সময়ে পাঁচ সেনার মৃত্যুর পরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এ দিন ওই অভিযানে এক জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা। অন্য দিকে বারামুলায় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে এক জঙ্গি।
গত কাল রাজৌরিতে জঙ্গি-দমন অভিযানের সময়ে বিস্ফোরণে নিহত হন পাঁচ প্যারা কমান্ডো। আহত হন মেজর স্তরের এক অফিসার। জঙ্গিদের এই দলটিই গত এপ্রিল মাসে জম্মুতে সেনার ট্রাকে হামলার জন্য দায়ী বলে দাবি বাহিনীর। তাতেও পাঁচ সেনা নিহত হন।
আজ ঘটনাস্থলে যান নর্দার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কমান্ডারদের কাছ থেকে অভিযানের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে খোঁজ নেন তিনি। সেনা জানিয়েছে, আজ সকালে এক জঙ্গি নিহত হয়েছে। আর এক জন জঙ্গি আহত হয়ে থাকতে পারে। যে গুহায় জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়েছিল, সেখান থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে সেনা। অভিযান এখনও চলছে।
আজ সকালে রাজৌরি পৌঁছন রাজনাথ। সেনা ঘাঁটিতে মোতায়েন সেনাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেনাপ্রধান মনোজ পাণ্ডে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী-সহ সেনাকর্তাদের কাছ থেকে অভিযানের খবর নেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। পরে উপরাজ্যপাল মনোজ সিন্হা ও সেনাকর্তাদের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন রাজনাথ। টুইটারে নিহত সেনাদের শ্রদ্ধা জানান তিনি। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিঙের বাসিন্দা নিহত প্যারা কমান্ডো সিদ্ধান্ত ছেত্রীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সেনার মতে, হামলা চালানোর নয়া কৌশল নিয়েছে জঙ্গিরা। নাগরিকদের উপরে গুলিবর্ষণের পরে তারা বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। একই ভাবে বাহিনীর উপরে হামলার পরেই বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। আজ উত্তর কাশ্মীরের বারামুলাতেও সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে এক লস্কর জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি বাহিনীর। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত জঙ্গির নাম আবিদ ওয়ানি। সে কুলগামের ইয়ারহল বাবাপোরার বাসিন্দা। পাশাপাশি কুলগামে হিজ়বুল জঙ্গি ফারুক আহমেদ বাটের বাবা আব্দুল গনি বাটের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
আজ জম্মুর বায়ুসেনা ঘাঁটিতে উপরাজ্যপাল ও সেনাকর্তারা নিহত কমান্ডোদের শ্রদ্ধা জানানোর পরে তাঁদের দেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। জম্মুর আখনুরের বাড়িতে তেরঙ্গায় মোড়া কফিনে শায়িত নিহত প্যারা কমান্ডো নীলম সিংহের দেহ দেখে তাঁর দশ বছরের মেয়ে পাওয়ানা কেঁদে বলতে থাকে, ‘‘উঠছ না কেন? আমি আর কিছু চাই না। তুমি শুধু ফিরে এসো বাবা।’’ সামলানো যাচ্ছিল না তার ভাই, সাত বছরের অঙ্কিতকেও। স্বামীর মুখ দু’হাতে ধরে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলেন বন্দনা। তার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনিও। স্লোগান ওঠে, ‘‘নীলম সিংহ অমর রহে...।’’