অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে রাজনাথ সিংহ (খবর পৃঃ ৭)। রবিবার নয়াদিল্লির সর্দার বল্লভভাই পটেল কোভিড হাসপাতাল উদ্বোধনে। পিটিআই
বৃহত্তম কোভিড হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেখানেই দূরত্ববিধি শিকেয় তুলে কাছাকাছি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল! কেজরীকে দু’হাতে ধরে শুভেচ্ছা জানালেন রাজনাথ!
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারংবার ‘দো গজ কি দূরি’ বা দু’গজ দূরত্ব রেখে চলার উপরে জোর দিচ্ছেন। গোটা বিশ্বের চিকিৎসক সমাজ দূরত্ববিধি মানতে বলছেন। তাবড় রাষ্ট্রনেতা হ্যান্ডশেক-এর বদলে ভারতীয় নমস্কার-রীতি অনুসরণ করছেন। ক’দিন আগে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় মোদী দেশবাসীকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করে বলেছেন যে, আনলক-পর্বে আগের মতো নিয়ম মেনে চলছেন না অনেকেই। সেটা ঠিক হচ্ছে না। হাত ধোওয়া, মাস্ক পরা আর ‘দো গজ কি দূরি’— মানতেই হবে। রাজনাথ দৃশ্যতই এদিন ফিরে গিয়েছিলেন ‘পুরনো অভ্যাসে’।
স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক মহলে এই নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। ঘরোয়া ভাবে বিরোধীরা অনেকে এর মধ্যে অন্য তাৎপর্যও খুঁজে পাচ্ছেন। দ্বিতীয় বার জিতে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কেজরীকে আর আগের মতো বিজেপি-বিরোধী চেহারায় দেখা যাচ্ছে না। দিল্লি ভোটের আগে থেকেই একের পর এক ঘটনায়— জামিয়া-জেএনইউ-শাহিনবাগ— কেজরীকে অধিকাংশ সময়েই নীরব থাকতে দেখা গিয়েছে। ভোটের পরেও তিনি সেই ধারাই অনুসরণ করেছেন। দিল্লি হিংসা থেকে শুরু করে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থা, কেজরী মূলত নীরবতার নীতিই নিয়েছেন। কানহাইয়া কুমার-সহ একাধিক ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে তদন্তে সায় দিয়েছেন। গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে তাঁর ‘বোঝাপড়া’ নিয়ে জল্পনা বারবারই দানা বেঁধেছে রাজধানীর অলিন্দে। এদিন সেই ‘নৈকট্য’ই দূরত্ববিধি উড়িয়ে প্রকাশ্যে এসেছে বলে মত বিরোধী নেতৃত্বের একাংশের।
আরও পড়ুন: টিকা কবে? গবেষকের লেখা ওড়াল সরকার
রবিবার বিশ্বের বৃহত্তম কোভিড হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। সর্দার বল্লভভাই পটেলের নামাঙ্কিত করোনা কেয়ার হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন উপরাজ্যপাল অনিল বাইজল। তিনি বলেন, দিল্লি ও এনসিআর-এর বাসিন্দারা এই হাসপাতালে পরিষেবা পাবেন। হাসপাতালটির প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা কেজরীবাল সরকার দিলেও এটি পরিচালনার দায়িত্ব থাকবে ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি)-এর উপর। ১৭০০ ফুট লম্বা, ৭০০ ফুট চওড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১০০০ শয্যার এই হাসপাতালটি মাত্র ১২ দিনে তৈরি করেছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন (ডিআরডিও)। টাটা সন্স এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় করেই হাসপাতালটি গড়ে তুলেছে তারা।
ডিআরডিও-র তরফে রবিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া শহিদ জওয়ানদের অমর করে রাখতে তাঁদের নামে এই হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলির নামকরণ করা হবে।’’ ডিআরডিও-র চেয়ারম্যান জি সতীশ রেড্ডি বলেন, ‘‘হাসপাতালটিতে চিকিৎসার সব রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে বিনামূল্যে। সেনাবাহিনীর জওয়ানেরা দিনরাত পরিষেবা দেবেন।’’ হাসপাতালটিতে আপাতত শুধু মৃদু উপসর্গ ও উপসর্গহীন রোগীদের চিকিৎসা করা হবে। যাঁদের উপসর্গ আছে, অথচ হোম আইসোলেশনে থাকার সামর্থ্য নেই, তাঁদের এখানে রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে।