বাঙালির পর্যটন মানচিত্রে ইদানীং অনেকটা ম্লান হাওয়াবদলের গন্তব্য ‘পশ্চিম’। তবে প্রতি বছরই বড় সংখ্যক বাঙালি পর্যটকের পা পড়ে বিহারের রাজগীর-নালন্দায়।
শুধু বাঙালিরাই নন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরাও বেড়াতে আসেন এখানে। এ বার রাজগীরের মুকুটে যোগ হতে চলেছে নতুন পালক।
রোপওয়ে তো আগে থেকেই ছিল। এ বার রাজগীরে তৈরি হতে চলেছে নেচার সাফারি এবং জু সাফারি।
পর্যটনের সঙ্গে প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর নির্মীয়মাণ এই প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
নীতীশ জানিয়েছেন, নেচার সাফারি এমন ভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে সব বয়সের মানুষ পাহাড় ও অরণ্যকে উপভোগ করতে পারে।
পর্যটকদের বেড়ানোর আনন্দ যাতে মাটি না হয়, তার জন্য কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থারও বন্দোবস্ত করা হবে। আশ্বাস নীতীশের।
নেচার পার্কের মূল আকর্ষণ হবে কাচের সেতু। ‘সেতু’ বলা হলেও দু’টি স্থানের মধ্যে কিন্তু সংযোগ রক্ষা করবে না এই কাচ-পথ।
বরং, ৮৫ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট চওড়া এই ঝুলন্ত পথের শেষ প্রান্তে থাকছে একটি ঘেরা চত্বর। সেখানে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যাবে সৌন্দর্য। তার পর আবার ফিরে আসা অন্য প্রান্তে।
বিহারে নির্মীয়মাণ এই কাচসেতু তৈরি করা হয়েছে চিনের ঝাংজিয়াজি গ্লাস ফুটপাথের অনুকরণে।
চিনের হুনান প্রদেশের এই স্কাইওয়াক ব্রিজ পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালের ২০ অগস্ট।
ভূমি থেকে ৯৮০ ফুট উচ্চতায় ১৪১০ ফুট লম্বা এবং ২০ ফুট চওড়া এই কাচসেতু একসঙ্গে ৮০০ জন পর্যটকের ভারবহনে সক্ষম।
তবে রাজগীরের সেতুই দেশের প্রথম কাচের আকাশপথ নয়। এর আগে উত্তরাখণ্ডের হৃষিকেশে কাচের সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পেলিংয়েও আছে গ্লাস স্কাইওয়াক।
লছমনঝুলার আদি অকৃত্রিম সাসপেনশন ব্রিজটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯২৩ সালে। সম্প্রতি সেতুটিকে ব্যবহারের অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
ফলে ঋষিকেশে একটি নতুন গ্লাসব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে সেটি সম্পূর্ণ কাচের হবে না। দু’দিকে কাচের অংশের মধ্যে মাঝখানে থাকবে অ্যাসফল্টের পথও।
ঋষিকেশের নতুন এই সেতু চওড়ায় হবে ৮ মিটার। লম্বায় ১৩২.২ মিটার। অ্যাসফল্ট পথের দু’পাশ বরাবর থাকবে ৩.৫ ইঞ্জি পুরু কাচের প্রান্ত।
২০২১ সালের কুম্ভমেলার আগেই ঋষিকেশের সেতুটি উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এখনই নিশ্চিত করে উদ্বোধনের ডেডলাইন বলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ।
অন্য দিকে রাজগীরের কাচসেতুর কাজ ২০২১ সালের মার্চের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন নীতীশ কুমার।
আড়াই হাজার বছরেরও প্রাচীন শহর রাজগৃহ বা রাজগীর ছিল প্রাচীন মগধের প্রথম রাজধানী। মৌর্য শাসনকালে দেশের শ্রেষ্ঠ জনপদগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল এই নগর।
খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শতকে প্রতিবাদী আন্দোলনের আবহে এই শহরে ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করেছিলেন মহাবীর এবং গৌতম বুদ্ধ, দু’জনেই। আজও বৌদ্ধ ও জৈনদের কাছে এই নালন্দা জেলার শহর পুণ্যভূমি।
রাজগীরের কাছে বুদ্ধগয়া, নালন্দা বিহারে ধ্বংসাবশেষ এবং পাওয়াপুরী ইতিহাসপ্রিয় পর্যটক এবং বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীদের প্রিয় গন্তব্য।
বিহার সরকারের আশা, পর্যটকদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হবে নেচার ও জু সাফারিও। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল চিনের ঝাংজিয়াজি গ্লাস ফুটপাথে দাঁড়িয়ে পর্যটকদের নানারকম আচরণ। হিউয়েন সাঙের দেশ থেকে সেই আতঙ্কমিশ্রিত আনন্দের স্বাদ এ বার আসতে চলেছে তাঁর প্রিয় বিচরণক্ষেত্র ভারতেও।