রাহুল গাঁধী ও পিনারাই বিজয়ন।
কয়েক দিন আগেই অ-বিজেপি সব দল একসঙ্গে মিলে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করেছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) রাজ্যে কার্যকর না করার দাবিতে। তার রেশ কাটার আগেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ও সাংসদ রাহুল গাঁধীর চিঠি ঘিরে নতুন বিতর্ক বাধল। রাহুলের সঙ্গে একমত নয় তাঁর দলের কেরল প্রদেশ শাখাই!
প্রবাসী মালয়ালিদের এক ছাতায় আনতে উদ্যোগী হয়ে ‘লোক কেরল সভা’র আয়োজন করেছে কেরলের বাম সরকার। দেশের ২১টি রাজ্য এবং বাইরের ৪৭টি দেশে ছড়িয়ে থাকা মালয়ালিরা ওই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন। প্রবাসী মালয়ালিদের সঙ্গে তাঁদের মাতৃভূমির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মেলবন্ধন ঘটানোর জন্যই এমন উদ্যোগ। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে এবং সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নকে চিঠি দিয়েছেন ওয়েনাডের কংগ্রেস সাংসদ রাহুল। তাঁকে পাল্টা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিজয়নও। বিতর্ক বেধেছে এই আদানপ্রদান ঘিরেই।
কেরলের প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং ইউডিএফ নেতারা ‘লোক কেরল সভা’র অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, কান্নুরে একটি কনভেনশন সেন্টার গড়ার অনুমতি না পেয়ে প্রবাসী এক ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের মতে, তার পরে বিজয়নদের এমন আয়োজন শুধুই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। তাঁরা যে রাহুলের সহযোগিতার নীতিতে ভরসা রাখছেন না, সে কথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মুল্লাপল্লি রামচন্দ্রন ও বিরোধী দলনেতা রমেশ চেন্নিথালা দলের হাইকম্যান্ডকে জানিয়েও দিয়েছেন। এই বিষয়ে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালের বক্তব্য, ‘‘সাংসদ হিসেবে শিষ্টাচার দেখিয়ে রাহুল ওই চিঠি দিয়েছেন। রাজনৈতিক ভাবে কেরল প্রদেশ কংগ্রেস যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, নেবে।’’
নানা দেশে, বিশেষত উপসাগরীয় রাষ্ট্রে ছড়িয়ে থাকা মালয়ালিরা কেরলের প্রথম সারির সব রাজনৈতিক দলকেই খোলা হাতে চাঁদা দেন। স্বভাবতই সব দলই প্রবাসীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে সচেষ্ট থাকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘লোক কেরল সভা’ বিজয়নদের প্রবাসী মন জয়ে এগিয়ে দিতে পারে। সেই কারণেই বিরোধী কংগ্রেস শাসক বামেদের সঙ্গে এক মঞ্চে না থেকে পৃথক পথে হাঁটতে চাইছে। একই ভাবে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি-র প্রশ্নে বিধানসভায় সহমত বা প্রথম ধর্নায় শামিল হলেও কংগ্রেস এবং তাদের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ আর বামেদের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে রাজি নয়। আগামী ২৬ জানুয়ারি বামেদের মানববন্ধনেও বিরোধী কংগ্রেস যোগ দেবে না। তাদের যুক্তি, শাসক বাম ও বিরোধী কংগ্রেস একাসনে বসলে বিজেপির ফায়দা হবে।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক অবশ্য বলছেন, ‘‘প্রবাসী মালয়ালিদের জন্য উদ্যোগের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। সরকারে যে-ই থাকুক, এই মঞ্চ কেরলের সঙ্গে প্রবাসীদের সেতুবন্ধনে সহায়ক হবে। সেখান থেকে সরে দাঁড়ানোর অর্থ কী?’’ রাজ্য সরকার নাগরিকত্ব আইনের যে বিরোধিতা করছে, তার প্রতিবাদে বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরনও বিজয়নদের প্রবাসী-উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।