Rahul Gandhi

হারের ব্যাখ্যায় দিগ্বিজয়ের ইভিএম-তত্ত্বে আপত্তি রাহুলের

রাহুলের কথা শুনে দিগ্বিজয় বলেন, আগে তাঁকে কথা শেষ করতে দেওয়া হোক। সবাই চমকে উঠে দিগ্বিজয়ের দিকে তাকান। তার পরে দিগ্বিজয় বলেন, তাঁর কাছে ইভিএমের সমস্যার অনেক উদাহরণ রয়েছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৩
Share:

রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের পরাজয়ের জন্য রাহুল গান্ধী শুধুমাত্র ইভিএম-কে দায়ী করতে রাজি নন। মধ্যপ্রদেশের দুই প্রবীণ নেতা কমল নাথ ও দিগ্বিজয় সিংহ মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের ‘অপ্রত্যাশিত হার’-এর জন্য ইলেকট্রনিক ভোট যন্ত্রের (ইভিএম) দিকে আঙুল তুলেছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে রাহুল গান্ধী এই তত্ত্ব মানতে চাননি।

Advertisement

কংগ্রেস সূত্রের খবর, বৈঠকে দিগ্বিজয় ইভিএম-কে দায়ী করলেও রাহুল একে ‘অযৌক্তিক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে রাহুল গান্ধী ও তাঁর একদা সবথেকে ঘনিষ্ঠ দিগ্বিজয়ের মধ্যে সামান্য বাদানুবাদও হয়। রাহুল দিগ্বিজয়ের কথায় আপত্তি তুললে দিগ্বিজয় বলেন, তাঁকে পুরো কথা শেষ করতে দেওয়া হোক। কংগ্রেসের বাকি নেতারা এতে কার্যত চমকে ওঠেন।

হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিজেপির কাছে কংগ্রেস হারলেও এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের হার কংগ্রেসকে জোর ধাক্কা দিয়েছে। কারণ, রাজস্থানে পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদল হয়। তার উপরে সেখানে দীর্ঘ দিন ধরে অশোক গহলৌত ও সচিন পাইলটের মধ্যে বিবাদ চলছিল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ে জয় সম্পর্কে কংগ্রেস নিশ্চিত ছিল। ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, দুই রাজ্যেই কংগ্রেস হেরেছে। মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতাসীন বিজেপি পাঁচ বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি ভোট পেয়েছে।
এর পরেই মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের দুই কাণ্ডারী কমল নাথ ও দিগ্বিজয় সিংহ ইভিএমের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। কমল নাথ বলেছিলেন, কিছু বিধায়ক নিজেদের গ্রামে মাত্র ৫০টি ভোট পেয়েছেন। এটা কী ভাবে হয়? বহু দিন ধরেই ইভিএম হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা নিয়ে সরব দিগ্বিজয় সিংহ বলেছিলেন, যে কোনও চিপ-যুক্ত যন্ত্র হ্যাক করা যায়। কংগ্রেসের পোস্টাল ব্যালটের ভোট ও ইভিএম-এর ভোটের হারের মধ্যে বিস্তর ফারাক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।

Advertisement

কংগ্রেস সূত্রের খবর, বৈঠকে দিগ্বিজয় একই যুক্তি দিতে গেলে রাহুল তাঁকে থামিয়ে দেন। রাহুল বলেন, প্রতি বার কংগ্রেসের হারের পরে ইভিএম-কে দায়ী করা হয়। না হলে এমন কিছু কারণ বলা হয়, যা যুক্তিযুক্ত মনে হয় না। রাহুল মধ্যপ্রদেশের ভোটের হারের উল্লেখ করেন। রাজস্থানের সঙ্গে তুলনা টেনে বলেন, রাজস্থানে কংগ্রেস ও বিজেপির ভোটের হারের ফারাক মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ও কংগ্রেসের ভোটের হারের ফারাক প্রায় ৮ শতাংশ। প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মোট ভোটের প্রায় ৪৮.৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। পাঁচ বছর আগে তারা পেয়েছিল ৪১.০২ শতাংশ। সে বার কংগ্রেস পেয়েছিল ৪০.৮৯ শতাংশ। এ বার পেয়েছে ৪০.৪০ শতাংশ। অর্থাৎ, কংগ্রেসের আধ শতাংশ মতো ভোট কমেছে। কিন্তু বিজেপি ভোটের হার প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ বাড়িয়েছে।

রাহুলের কথা শুনে দিগ্বিজয় বলেন, আগে তাঁকে কথা শেষ করতে দেওয়া হোক। সবাই চমকে উঠে দিগ্বিজয়ের দিকে তাকান। তার পরে দিগ্বিজয় বলেন, তাঁর কাছে ইভিএমের সমস্যার অনেক উদাহরণ রয়েছে। ভোটের সময়ে ইভিএম নিয়ে অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছিল।

কংগ্রেসের ওই বৈঠকের দু’দিন আগেই বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র তরফে প্রস্তাব পাশ করে দাবি করা হয়েছিল, ইভিএম-এর ভোটগণনার সঙ্গে ভিভিপ্যাট-এর সমস্ত স্লিপও গোনা হোক। এখন ভিভিপ্যাট স্লিপ আলাদা বাক্সে জমা পড়ে। তা ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। তা হলে ভোটার নিশ্চিত হতে পারবেন, যে বোতাম টিপেছেন, সেখানেই ভোট পড়েছে। তারপরে সেই স্লিপ পৃথক ব্যালট বাক্সে জমা করে গুণতে হবে। কারণ, ইভিএম হ্যাক করা যায় বলে অনেক বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন।

রাহুলের মন্তব্যের পরে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি এর সঙ্গে একমত নন? ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলা কতটা ঠিক, তা নিয়ে কংগ্রেসে দ্বিমত রয়েইছে। দিগ্বিজয় সিংহের মতো গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ স্যাম পিত্রোদাও ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আবার কার্তি চিদম্বরমের মতো নবীনরা ইভিএম হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা মানতে রাজি নন। রাহুলের ঘনিষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য, রাহুল ইভিএম নিয়ে কিছু বলেননি। তিনি মধ্যপ্রদেশের হারের জন্য শুধুমাত্র ইভিএম-কে দায়ী করা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement