Rahul Gandhi

ঘৃণাকে হারানোর ডাক দিয়ে যাত্রা শুরু রাহুলের

আগামী পাঁচ মাস ধরে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ৩,৭৫০ কিলোমিটার এই যাত্রাই যেন কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবনের বিশল্যকরণী হয়ে ওঠে, রাহুলের অনুগামীরা তেমনটাই প্রার্থনা করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৩১
Share:

‘ভারত জোড়ো’ কর্মসূচিতে রাহুল গান্ধীর হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিচ্ছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত ও ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল। কন্যাকুমারীতে। পিটিআই

১৯৯১ সালের ২১ মে-র রাতে এলটিটিই যখন রাজীব গান্ধীর উপরে প্রাণঘাতী হামলা চালায়, তখন রাহুল গান্ধীর বয়স মাত্র ২১ বছর।

Advertisement

বুধবার সকালে ৫২ বছরের রাহুল সেই শ্রীপেরুম্বুদুরে রাজীবের স্মৃতিস্থলে বাবার ছবির সামনে দাঁড়ালেন। তার পরে টুইট করে বললেন, ‘‘ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতির কাছে আমার বাবাকে হারিয়েছিলাম। আমার প্রিয় দেশকে তার কাছে হারাব না।’’ বিজেপি নেতারা বলছেন, নিছক রাজনৈতিক বিবৃতি। কিন্তু রাহুলের বক্তব্য, ‘‘ঘৃণার ঊর্ধ্বে ভালবাসার জয় হবে। আশার কাছে ভয় হার মানবে। সবাই মিলে আমরা জয় করব।’’

সকালে বাবার স্মৃতিস্থলে প্রার্থনা সেরেই বুধবার বিকেল থেকে রাহুল গান্ধী ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শুরু করলেন। আগামী পাঁচ মাস ধরে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ৩,৭৫০ কিলোমিটার এই যাত্রাই যেন কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবনের বিশল্যকরণী হয়ে ওঠে, রাহুলের অনুগামীরা তেমনটাই প্রার্থনা করছেন। আর প্রবীণ নেতাদের মতে, নরেন্দ্র মোদীকে টেক্কা দেওয়ার মতো জায়গায় পৌঁছতে রাহুল গান্ধীর এটাই শেষ ‘লঞ্চ প্যাড’। এই ভারত জোড়ো যাত্রায় কংগ্রেসের পালে হাওয়া না উঠলে ২০২৪-এর আগে অন্তত রাহুল আর সুযোগ পাবেন না। চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকা সনিয়া গান্ধী আজ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘‘আমি নিশ্চিত আমাদের সংগঠন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে।’’

Advertisement

পাঁচ মাসের ভারত জোড়ো যাত্রায় কংগ্রেসের মোট ১১৭ জন নেতানেত্রী পুরো রাস্তাই হাঁটবেন। প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘন্টা, ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার হাঁটতে হবে। সিংহভাগ যাত্রাপথেই রাহুল নিজে হাঁটবেন বলে কংগ্রেস নেতাদের দাবি। রাহুল ও অন্যদের থাকার জন্য ৬০টি জাহাজের পণ্যবাহী কন্টেনারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মধ্যেই শোয়া, থাকা, শৌচাগারের ব্যবস্থা। বাতানুকূল যন্ত্রও থাকবে। প্রতিদিন যেখানে যাত্রা শেষ নিয়ে রাখা হবে। রাহুল বা যাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের কেউই হোটেল বা অতিথিশালায় থাকবেন না।

বিজেপি আজ কটাক্ষ করেছে, দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার আগে রাহুল কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ করুন। বিক্ষুব্ধ নেতাদের কংগ্রেসের সঙ্গে জোড়ার চেষ্টা করুন। অন্যতম বিক্ষুব্ধ নেতা আনন্দ শর্মা অবশ্য জানিয়েছেন, যাত্রা হিমাচলের কাছে এলে তিনি তাতে অংশ নেবেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া হিমন্তবিশ্ব শর্মা রাহুলকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ভারতকে জুড়তে হলে রাহুলের পাকিস্তানে যাওয়া উচিত। কংগ্রেসের অশোক গহলৌত, জয়রাম রমেশরা বলছেন, যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁদের নিয়ে দল ভাবছে না। বরং গহলৌত ফের বলেছেন, রাহুলকে দলের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বলবেন। গহলৌতের কথায়, ‘‘রাহুল নিজেই বলেছিলেন, দল যা দায়িত্ব দেবে, পালন করবেন। দলের সামনে আজ যখন বড় চ্যালেঞ্জ, ওঁকেই হাল ধরতে হবে।’’

আজ যাত্রার শুরুতে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন রাহুলের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। রাহুল তার পরে বলেন, ‘‘তিরঙ্গা আমাদের ঐক্য ও বৈচিত্রের পরিচয়। আমাদের স্বাভিমান। আজ তিরঙ্গা হাতে নিয়ে ভারত জোড়ো যাত্রা-র প্রথম পদক্ষেপ করলাম। এখনও মাইলের পর মাইল চলা বাকি।’’ বিকেলে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পরে আজ কন্যাকুমারীতে রাহুল বিজেপি-আরএসএসকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘‘তিরঙ্গা ও তার মূল্যবোধকে রক্ষা করতে হবে। বিজেপি মনে করে, তারা ধর্ম, ভাষার ভিত্তিকে দেশের টুকরো টুকরো করতে পাবে। তা হবে না।’’

কংগ্রেস-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতরকে কাজে লাগানোর বিরুদ্ধেও সরব হয়ে রাহুল বলেন, ‘‘ওরা মনে করে সিবিআই, ইডি দিয়ে বিরোধীদের ভয় দেখানো যাবে। একজন বিরোধী নেতাকেও বিজেপি ভয় দেখাতে পারবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement