—ফাইল চিত্র।
রাহুল গাঁধী দলের বিক্ষুব্ধদের কাছে জানতে চাইলেন, যখন সনিয়া গাঁধী অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি, তখনই তাঁদের চিঠি লেখার সময় হল? যখন কংগ্রেস রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশে বিজেপির সঙ্গে লড়াই করছে, সংগঠনে রদবদল নিয়ে চিঠি লেখার জন্য সেই সময়টাই বেছে নিতে হল?
আহমেদ পটেল বিক্ষুব্ধদের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়লেন, “আপনারা যে বলছেন, সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা সনিয়া গাঁধী কোন সিদ্ধান্ত সকলের সঙ্গে আলোচনা করে নেননি?”
এত দিন কংগ্রেসের মধ্যে রাহুল-শিবিরের সঙ্গে আহমেদ পটেলের শিবিরের ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে বলে অনেকে মনে করতেন। সোমবার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে দেখা গেল, রাহুল-আহমেদ এককাট্টা হয়ে ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের আক্রমণ করলেন। শুধু তা-ই নয়। আহমেদ পটেল বাকি সকলের সঙ্গে গলা মিলিয়ে দাবি তুললেন, রাহুল অবিলম্বে কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নিন। এই নতুন সমীকরণ উঠে আসার পরে দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতারা এ বার কী করবেন?
আরও পড়ুন: হাজারে কাজ মাত্র একের! মোদীকে নিশানা রাহুলের
আরও পড়ুন: বছর ২১ পরে, প্রত্যাখ্যান অস্ত্রে জয় দ্বিতীয় বার
ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পরে রাতে গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, কপিল সিব্বল, মণীশ তিওয়ারি, শশী তারুররা নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেন। ফলে তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে অবশ্য তাঁরা সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা জানান। রাহুলকে ফের সভাপতি পদে ফেরার আর্জিও জানান তাঁরা। তাঁদের চিঠি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অম্বিকা সোনি-সহ একাধিক নেতানেত্রী শাস্তিমূলক পদক্ষেপের দাবি তোলেন। গুলাম নবি, আনন্দ শর্মারা বলেন, চিঠি ফাঁসের জন্য যাঁরা দায়ী, এখনই তাঁদের শাস্তি দেওয়া হোক। তবে চিঠিতে জানানো অবস্থান থেকে তাঁরা সরছেন না। তাঁরা দলের কল্যাণের জন্যই চিঠি লিখেছিলেন।
কংগ্রেসের একাংশ অবশ্য মনে করছে, বিক্ষুব্ধদের পক্ষে এর বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ কারওরই বিশেষ জনসমর্থন নেই। দলেও তাঁদের প্রভাব নেই বললেই চলে। তা হলে তাঁরা চিঠি লিখলেন কেন?
কংগ্রেস নেতাদের ব্যাখ্যা, এঁদের ক্ষোভের কারণ রাহুলের কাজকর্মের পদ্ধতি। তিনি নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আস্থাভাজন ছাড়া বাকি কারও সঙ্গে আলোচনা করছেন না। ফলে গুলাম নবি, আনন্দ শর্মা, বীরাপ্পা মইলিরা ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছেন। ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের মতো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদেরও গুরুত্ব কমেছে। রাজ বব্বর, অরবিন্দ সিংহ লাভলির মতো নেতারা দলে ক্ষমতা হারিয়ে ক্ষুব্ধ। জিতিন প্রসাদ, মিলিন্দ দেওরা, সন্দীপ দীক্ষিতের মতো তরুণ প্রজন্মের নেতারা আরও ক্ষমতা চাইছেন। মণীশ তিওয়ারি, শশী তারুর আবার অধীর চৌধুরীকে লোকসভার দলনেতা করায় ক্ষুব্ধ। ফলে সমস্যাটা আসলে তথাকথিত নবীন বনাম প্রবীণের
দ্বন্দ্ব নয়।
ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পরে সাংবাদিক বৈঠকে রণদীপ সুরজেওয়ালা (বাঁ দিকে) এবং কে সি বেণুগোপাল। ছবি: পিটিআই।
কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রাজস্থানে দেখা গেল, আগে এই রকম সমস্যা মেটাতে যাঁদের ডাক পড়ত, এখন তাঁদের বদলে কে সি বেণুগোপাল, অজয় মাকন, রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাদের ডাক পড়ছে। আবার এই সঙ্কটের সময়েই রাহুলের সঙ্গে আহমেদ পটেলের নতুন সমীকরণ গড়ে উঠেছে। আহমেদই সচিন পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে, তাঁর ক্ষোভ নিরসনের চেষ্টা করেছেন। প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার সঙ্গে তিনিই সচিন ও তাঁর অনুগামীদের নালিশ শুনেছেন।
হরিয়ানার কংগ্রেস নেত্রী কুমারী শৈলজা রবিবারই অভিযোগ তুলেছিলেন, ‘বিক্ষুব্ধ’-রা বিজেপির সঙ্গে ষড়যন্ত্রে শামিল। গুলাম নবি বৈঠকে বলেন, এই অভিযোগ প্রমাণ হলে তিনি কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেবেন। শৈলজা ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নন। কিন্তু খবর ছড়ায়, রাহুলও বৈঠকে তাঁর সুরেই অভিযোগ করেছেন। সিব্বল তা শুনে টুইট করেন, প্রতিদিন আদালতে কংগ্রেসের হয়ে লড়াই করার পরে কী ভাবে বিজেপির সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ ওঠে! কিন্তু সুরজেওয়ালা জানান, রাহুল এমন কিছুই বলেননি। সিব্বলও পরে বলেন, তাঁকে রাহুল বার্তা পাঠিয়েছেন। কাজেই তিনি আগের মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।
এ দিন বৈঠকে এ কে অ্যান্টনি বলেন, ‘‘হাইকমান্ডকে দুর্বল করার অর্থ দলকে দুর্বল করা। কী ভাবে আমার সহকর্মীরা এই চিঠি লিখলেন?’’ গুলাম নবি ও আনন্দ শর্মা যে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা ও উপ-দলনেতা, তা মনে করিয়ে আহমেদ বলেন, ‘‘আপনাদের এই চিঠি লেখা মানায় না।”
গুলাম নবি বরাবরই গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন বলে পরিচিত। আক্রমণের মুখে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে মনে করিয়ে দেন, তিনি ইন্দিরা ও রাজীব গাঁধীর সঙ্গে কাজ করেছেন। চিঠিতে যে তাঁরা সনিয়ার নেতৃত্বের প্রশংসা করে গাঁধী পরিবারের উপরে আস্থা রেখেছেন, তা বোঝাতে চিঠির তিনটি অনুচ্ছেদও পড়ে শোনান। চিঠি লেখার সময় নিয়ে রাহুলের প্রশ্নের জবাবে তাঁর বক্তব্য, তিনি সনিয়ার ব্যক্তিগত সচিবের থেকে তাঁর হাসপাতাল থেকে
ফেরা ও সুস্থ থাকার খবর জেনে তবেই চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তার পরেও তাঁর সঙ্গে সনিয়ার কথা হয়েছে। সনিয়া অসুস্থতার কথা জানালে তিনি বলেছেন, আগে সুস্থ হয়ে উঠুন। পরে চিঠির কথা ভাবা যাবে।
গুলাম নবিরা জানিয়েছেন, ওয়ার্কিং কমিটিতে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সনিয়াকে সভানেত্রী পদে থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সনিয়া-রাহুলের নেতৃত্বে তাঁরাও আস্থা জানিয়েছেন। তা হলে সন্ধ্যায় অন্য বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে বৈঠক কেন? বিক্ষুব্ধ শিবিরের ব্যাখ্যা, যাঁরা ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নন, তাঁদের বৈঠকের ঘটনাবলি জানাতেই কথাবার্তা হয়েছে।