রাফাল মামলা পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে। —ফাইল চিত্র
লোকসভা নির্বাচনের আগে রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ এনে প্রচারে ঝড় তুলেছিল বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার মোদী সরকারকে স্বস্তি দিয়ে, ওই মামলা পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে সিবিআই তদন্তের দাবিও নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে রাফাল মামলা পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছিল বিরোধীরা। তার ভিত্তিতে গত ১০ মে রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার, শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, ‘‘আমরা মনে করি না, রাফাল চুক্তিতে এফআইআর অথবা তদন্তের কোনও প্রয়োজন রয়েছে।’’ প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির ওই বেঞ্চ আরও বলে, ‘‘এই মামলা পুনর্বিবেচনার আর্জির সারবত্তা নেই।’’
কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, ফরাসি সংস্থা দাসোর সঙ্গে করা রাফাল চুক্তিতে ৫৯ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। সেই সঙ্গে দাসোর অফসেট পার্টনার হিসাবে অনিল অম্বানির সংস্থাকে বেছে নেওয়া নিয়েও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। কিন্তু, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, এই চুক্তিতে ‘‘কোনও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেই পক্ষপাতিত্ব করার প্রমাণ মেলেনি। ’’
আরও পড়ুন: ‘রাহুলের সতর্ক হওয়া উচিত’, মানহানির মামলায় দাঁড়ি টেনেও মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের
এর পরেও পাল্টা প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। মামলাকারী যশোবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরি এবং প্রশান্ত ভূষণ অভিযোগ করেন, ‘‘সিল করা খামে সই না করা একটি সরকারি নোটের উপর ভিত্তি করে’’ ২০১৮ সালে ওই মামলার রায় দেওয়া হয়েছিল।
লোকসভা নির্বাচনের আগে রাফাল চুক্তি নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। ভোট প্রচারে বিভিন্ন জনসভায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাফাল চুক্তিই মূল অস্ত্রই হয়ে ওঠে রাহুল গাঁধী-সহ কংগ্রেস নেতাদের। এর মাঝেই সংবাদ মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায় রাফাল চুক্তির গোপন নথি। সেই নথিকে হাতিয়ার করেই নতুন করে কোমর বাঁধতে থাকে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ ছিল, ফ্রান্সের সঙ্গে দর কষাকষিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর নাক গলিয়েছিল। তা নিয়ে তোলপাড় হয় সংসদেও। রাফাল চুক্তি নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ার দাবিও তোলে কংগ্রেস। মোদী সরকারের অবশ্য দাবি ছিল, সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে আবেদনকারীরা ওই মামলা পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে পারেন না।
আরও পড়ুন: দুর্দান্ত ভারতীয় বায়ুসেনা
লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে ২৩ মে। গত অক্টোবরে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথম দফার রাফাল বিমানও হস্তান্তরিত হয়েছে ভারতের হাতে। এবার সুপ্রিম কোর্টে রাফাল নিয়ে শেষ পর্যন্ত ধাক্কা খেতে হল বিরোধীদের। আর শীর্ষ আদালতের এ দিনের নির্দেশে স্বস্তি ফিরল সরকারেরও।
আরও পড়ুন: অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে কথা শুরু মহারাষ্ট্রে, ক্ষমতা থাকলে সরকার গড়ুক বিরোধীরা, চ্যালেঞ্জ অমিতের
রাফালের মূল চুক্তিটি হয়েছিল ইউপিএ আমলে। সে সময় ১২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ফ্রান্সের দাসো এভিয়েশন এবং ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্যাল লিমিটেড (হ্যাল)-এর সঙ্গে চুক্তি করেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। কিন্তু ২০১৪ সালে মোদী সরকার আসার পর, ২০১৫ ইউপিএ জমানায় করা সেই চুক্তি বাতিল করা হয়। তার বদলে, ফরাসি সংস্থা দাসো এভিয়েশনের সঙ্গে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি হয়। আর এই চুক্তি নিয়েই দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিরোধীরা।