রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।
জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী ঐক্যের সলতে পাকানো শুরু হলেও রাজ্য স্তরে এখনই কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলতে নারাজ। আজ খোদ রাহুল গান্ধী সেই বার্তা দিলেন। পটনায় শুক্রবারের বিরোধী বৈঠকের দিনই বাম শাসিত কেরলের পুলিশ সে রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে সুধাকরণকে গ্রেফতার করেছিল। এই গ্রেফতারির সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই বলে সিপিএম নেতৃত্ব যুক্তি দিলেও আজ রাহুল গান্ধী একে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ বলেই তকমা দিয়েছেন। একই ভাবে আম আদমি পার্টি যে ভাবে দিল্লির আমলাদের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ নিয়ে কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, তাতেও রাহুল গান্ধী ক্ষুব্ধ বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি আজ আবার বার্তা দিয়েছেন, তাঁরা জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে তৃণমূলের সঙ্গে এক মঞ্চে এলেও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।
পটনায় ১৫টি দলের বৈঠকের পরেও বিরোধী শিবিরের এই অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে প্রশ্ন উঠেছে, জুলাই মাসে শিমলায় পরবর্তী বৈঠকের পরে বিরোধী জোট কোন দিকে এগোবে?
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, রাজ্য স্তরে বিরোধ থাকবেই। তা সত্ত্বেও জাতীয় স্তরে বিরোধী দলগুলির এক সঙ্গে থাকার বার্তা দিতে হবে। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে ও রাজ্য স্তরে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। তাতে সব দল যোগ না দিলেও অধিকাংশ দলকে টানার চেষ্টা হবে। একই সঙ্গে ১৫টি দলের গোষ্ঠীতে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন অব মুসলিম লিগ, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, তামিলনাড়ুর ভিসিকে যোগ দেবে।
আজ এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার জানিয়েছেন, বিরোধীদের বৈঠকে ‘প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, নীতীশ কুমার বা রাহুল গান্ধী যাতে নিজেদের বিরোধী জোটের মুখ হিসেবে তুলে ধরতে না পারেন, সেই জন্যই কি পওয়ারের এই মন্তব্য? কংগ্রেস সূত্রের পাল্টা যুক্তি, রাহুল অন্তত নিজেকে বিরোধী জোটের মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন না। তা বলে কংগ্রেস অন্য দলের আগ্রাসনও মেনে নেবে না।
শুক্রবার পটনায় বৈঠকের পরে কেজরীওয়াল বলেছিলেন, সংসদে অধ্যাদেশ নিয়ে কংগ্রেস তাঁদের সমর্থনের কথা ঘোষণা না করলে তাঁদের পক্ষে শিমলায় পরের বিরোধী জোটের বৈঠকে থাকা সম্ভব হবে না। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বৈঠকের মধ্যেই মল্লিকার্জুন খড়্গে কেজরীওয়ালকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ঠিক সময় মতো কংগ্রেস সমর্থনের ঘোষণা করবে। তার পরেও কেজরীওয়ালের বিবৃতিকে রাহুল দ্বিচারিতা হিসেবে দেখছেন। একই ভাবে কেরলের পিনারাই বিজয়নের সরকারও কংগ্রেসকে কোণঠাসা করতে পুলিশকে কাজে লাগাচ্ছে বলে কংগ্রেস মনে করছে।
প্রতারণার মামলায় কেরলের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুধাকরণকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাতে জামিন পেলেও তাঁর বিরুদ্ধে আরও মামলা শুরু হয়েছে। রাহুল দিল্লিতে সুধাকরণ ও কেরলের বিরোধী দলনেতা ভি ডি সতীশনের সঙ্গে দেখা করেন। তার ঠিক আগেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যুক্তি দেন, ‘‘ওই গ্রেফতারির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। আমাদের কেরলের বাম সরকার পুলিশকে নির্দেশ দেয় না।’’ কিন্তু রাহুল বার্তা দেন, তিনি একে প্রতিহিংসার রাজনীতি হিসেবেই দেখছেন। সুধাকরণ ও সতীশনকে পাশে নিয়ে রাহুলের বক্তব্য, কংগ্রেস হুঁশিয়ারি ও প্রতিহিংসার রাজনীতিকে ভয় পায় না।
ইয়েচুরির বক্তব্য, কেরলে কংগ্রেস বনাম সিপিএমের লড়াই হবে। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিএমের বোঝাপড়া রয়েছে। অনেক রাজ্যেই বিজেপি-বিরোধী জোট রয়েছে। রাজ্যওয়াড়ি পরিস্থিতি অনুযায়ী রাজ্যের দলগুলির মধ্যেবোঝাপড়া হবে।