পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ। —ফাইল চিত্র
কেন্দ্রের তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে চার চারটি প্রস্তাবনা পাশ হয়ে গেল পঞ্জাব বিধানসভায়। উল্লেখযোগ্য ভাবে সব ক’টিতেই মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ পাশে পেয়েছেন শিরোমণি অকালি দল (এসএডি), আম আদমি পার্টি (আপ), লোক ইনসাফ পার্টির মতো বিরোধী দলকেও। টানা প্রায় পাঁচ ঘণ্টার বিতর্ক শেষে সর্বসম্মত ভাবে পাশ হয়ে গিয়েছে প্রস্তাবনা। বিতর্কে অংশ নেয়নি বিজেপি। প্রস্তাবনায় রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে তা আইনে পরিণত হবে।
রোনাভাইরাসের জন্য বিলম্বিত ও সংক্ষিপ্ত বাদল অধিবেশনে তিনটি কৃষি বিল পাশ করিয়েছে মোদী সরকার। বিল পাশ ঘিরে সংসদে নজিরবিহীন হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ওই তিনটি বিল পাশের পর থেকেই উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা-সহ প্রায় সারা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে নামে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন এবং কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। তার রেশ ধরেই এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যায় সবচেয়ে পুরনো শরিক পঞ্জাবের অকালি দল। অন্য দিকে সনিয়া গাঁধী নির্দেশ দেন, কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের বিলের বিরুদ্ধে প্রস্তাবনা পাশ করাতে। মঙ্গলবার পঞ্জাব বিধানসভায় পাশ হল সেই সংক্রান্ত চারটি সংশোধনী প্রস্তাবনা। সেগুলি হল ফার্মার্স প্রডিউস ফেসিলিটেশন অ্যাক্ট, ফার্মার্স এগ্রিমেন্ট অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস, এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট এবং সিভিল প্রোসিডিওর কোড।
কেন্দ্রের কৃষি আইনে বিরোধীদের মূল আপত্তি ছিল ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) নিয়ে। পঞ্জাবের বিধানসভায় পাশ হওয়া প্রস্তাবনায় সেই এমএসপি নিশ্চিত করা এবং আইনভঙ্গে কড়া শাস্তির বিধানও থাকছে। কোনও সংস্থা কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করে এমএসপি-র কম দামে ধান-গম কিনলে ন্যূনতম তিন বছরের জেলের সংস্থান রয়েছে প্রস্তাবনায়। এ ছাড়া কৃষিপণ্য মজুত ও কালোবাজারির বিরুদ্ধেও একাধিক ব্যবস্থার কথা প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে।
বিধানসভার বাইরে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র জানিয়েছেন, প্রস্তাবনার কপি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যপালকে। তিনি বলেন, ‘‘সংসদ কৃষি বিল পাশ করিয়েছে। কিন্তু আমরা বিধানসভায় সর্বসম্মত ভাবে কেন্দ্রের ওই আইনগুলি খারিজ করেছি। রাজ্যপালকে কপি পাঠিয়ে অনুমোদনের জন্য আর্জি জানানো হয়েছে।’’
সাংবিধানিক রীতি অনুসারে কেন্দ্রীয় কোনও বিলের বিরুদ্ধে বিধানসভায় আইন করতে গেলে প্রথমে রাজ্যপাল এবং তার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন দরকার হয়। মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র বলেছেন, ‘‘সেটা না হলে (রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির একজন বা দু’জনই সই না করলে) আমাদের হাতে বিকল্প আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাবনাগুলি যে হেতু সর্বসম্মত ভাবে পাশ হয়েছে, তাই আশা করি প্রস্তাবনায় সই করবেন রাজ্যপাল।’’ আগামী ২ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাতের অনুমতিও চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী। অকালি দলের পক্ষে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালকে সম্মতির আর্জি জানিয়েছেন বিধায়ক বিক্রম সিংহ মাজিথিয়া।