কলকাতার অনুষ্ঠানে তিস্তা। নিজস্ব চিত্র
উমর খালিদ বা তাঁর মতো প্রতিবাদীদের হয়ে সওয়াল করতে নতুন করে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন তিস্তা শেতলবাড়। তাঁর কথায়, “উমর খালিদ এবং অন্যদের আপনারা কতটা সমর্থন করেন, সেটা কথা নয়! আসল প্রশ্নটা হল, উমর খালিদদের সঙ্গে যেটা হচ্ছে, যে অজুহাতে তাঁদের বন্দি রাখা হচ্ছে, সেটা কি সমর্থনযোগ্য?” শনিবার সন্ধ্যায় একটি ভিন্ধর্মী চলচ্চিত্র উৎসব ‘কলকাতা পিপলস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ প্রাঙ্গণের সভায় এ কথা বলেন তিনি।
২০০২এর গুজরাতের ঘটনাবলিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আঙুল তোলার অভিযোগে এখনও মামলা ঝুলে আছে সাংবাদিক তথা মানবাধিকার কর্মী তিস্তার বিরুদ্ধে। গত বছর জুনে গ্রেফতারির পরে সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে জামিন পান তিস্তা। তবে এখনও তাঁকে নিয়মিত কোর্টে হাজিরা দিতে হচ্ছে।
২০২৩ এর ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে এ দেশের গণতন্ত্রের হাল নিয়ে এক গুচ্ছ প্রশ্ন এ দিন তিস্তা ছুড়ে দিয়েছেন। ‘ইন সার্চ অব জাস্টিস ইন নিউ ইন্ডিয়া’-শীর্ষক বক্তৃতায় তিস্তা প্রধানত ২০১৪-র পরে গণতন্ত্রের দুরবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, “ভাবতে হবে, সংসদীয় ব্যবস্থাকেই কি সংবিধান হত্যায় কাজেলাগানো হচ্ছে?”
প্রতিবাদের কণ্ঠরোধেই ইউএপিএ-র মতো কালা কানুন পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিস্তা বলেন, “সিপিএম, সিপিআই-এর মতো দলগুলি সংসদে এর বিরোধিতা করেছিল। আমার প্রশ্ন, কেন এমন আইনের দরকার হচ্ছে? তেলঙ্গানা, তামিলনাডু, বাংলা, কেরলের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি কি এই আইনের প্রয়োগ করছে না?” নাগরিকত্ব আইনের খাঁড়া প্রসঙ্গেও তিস্তা বলেন, “এই প্রথম দেশের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হল। এর প্রতিবাদ করায় ২০১৯-এ উত্তরপ্রদেশেই লাখো লোকের নামে হাজারো এফআইআর হয়েছিল। ২৩ জন পুলিশের হাতে নিহত।” তিস্তার বক্তব্য, “ন্যায় বিচারকে ধ্বস্ত করে পর পর অসাংবিধানিক কাজ চলছে। দিল্লি, ইলাহাবাদে বুলডোজ়ার তন্ত্র দেখা গিয়েছে। আবার ধর্মস্থান আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেশ জুড়ে মসজিদ, মাদ্রাসার জমি দখলের চেষ্টা চলছে।” আজকের ভারতের বদলের ছবিটা নিয়ে তিস্তা বলেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠানও এখন যেন ব্যক্তি মালিকানাধীন। রেলের টিকিট, তৎকালের দাম দেখলেই বোঝা যায়।” দিল্লি, কলকাতার মতো শহরে প্রতিবাদের জায়গা দেওয়া বা প্রতিবাদ অধিকার রক্ষা করার হয়েও সরব হন তিনি।
কস্তুরী বসুর সঙ্গে আলাপচারিতায় সংবাদমাধ্যম প্রসঙ্গে তিস্তা বলেন, “কয়েকটি বৈদ্যুতিন চ্যানেল-সহ মিডিয়ার একাংশ এখন খাপ পঞ্চায়েত। তবে অনেক প্রতিবাদী সাংবাদিক জেলে। অতিমারিতে অনেকের প্রাণও গিয়েছে। কিছু সংবাদমাধ্যম এবং স্বাধীন সাংবাদিক কঠিন পরিস্থিতিতে পাল্টা বয়ান তুলে ধরেছেন। আজকের ভারতে এটাও সহজ নয়।”