GST

kerala: প্যাকেটের পণ্যে জিএসটি আদায়ে বিদ্রোহ কেরলের

জিএসটি পরিষদের কোনও সিদ্ধান্তে বিরোধী শাসিত রাজ্যের আপত্তি থাকলেও সব রাজ্যই তা কার্যকর করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২২ ০৬:১৫
Share:

জিএসটি পরিষদের সিদ্ধান্ত মানবে না কেরল প্রতিবাদ সংসদেও ৬।

জিএসটি পরিষদের সিদ্ধান্ত হলেও, ছোট দোকানে বিক্রি হওয়া বা মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি প্যাকেটবন্দি ও লেবেল সাঁটা খাদ্যপণ্যে ৫ শতাংশ জিএসটি চাপাবে না বলে ঘোষণা করল কেরলের পিনারাই বিজয়ন সরকার।

Advertisement

কার্যত এই প্রথম কোনও রাজ্য জিএসটি পরিষদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাঁটতে চলেছে। এত দিন জিএসটি পরিষদের কোনও সিদ্ধান্তে বিরোধী শাসিত রাজ্যের আপত্তি থাকলেও সব রাজ্যই তা কার্যকর করেছে। জিএসটি-তে ‘এক দেশ, এক কর’ নীতি মেনেই সকলে চলেছে। এ বার কেরলের বাম সরকার জিএসটি পরিষদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাঁটলে জিএসটি-র কাঠামোতেই আঘাত আসবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

বিরোধীদের তোপের মুখে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মঙ্গলবারই জানিয়েছিলেন, জিএসটি পরিষদের এই সিদ্ধান্তে অ-বিজেপি রাজ্যগুলির অর্থমন্ত্রীরাও সায় দিয়েছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের অর্থমন্ত্রীরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা এতে আপত্তি তুলেছিলেন। আরও এক কদম এগিয়ে কেরলের অর্থমন্ত্রী কে এন বালগোপাল জানিয়েছেন, কুদুম্বশ্রী প্রকল্পের অধীন মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির তৈরি পণ্যে কেরল সরকার জিএসটি আদায় করবে না। ছোট দোকানে বিক্রি হওয়া এক-দু’কেজি প্যাকেটবন্দি খাদ্যপণ্যেও জিএসটি আদায় করা হবে না।

Advertisement

বিরোধীদের বক্তব্য মূলত দু’টি। এক, জিএসটি পরিষদে কেন্দ্র নিজের সিদ্ধান্ত রাজ্যগুলির উপরে চাপিয়ে দিচ্ছে। দুই, জিএসটি পরিষদের সিদ্ধান্ত আসলে সুপারিশ। কেউ তা মানতে বাধ্য নয়। কিছু দিন আগে সুপ্রিম কোর্ট ঠিক এই কথাই বলেছিল। তার পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারামন বলেছিলেন, জিএসটি পরিষদের সিদ্ধান্ত আইনত সুপারিশ হলেও কেন্দ্র, সব রাজ্যই তা মেনে চলবে। কিন্তু এখন তা মানতে আপত্তি জানিয়েছে কেরল। ভবিষ্যতে অন্য রাজ্যও জিএসটি পরিষদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে অরাজি হলে আইনি জটিলতা তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেরলের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, “এতে যদি কেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা হলেও আমরা আপস করতে রাজি নই।”

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন গত কালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে রাজ্যের অবস্থান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ছোট দোকান, মুদিখানায় আগে থেকেই চাল, ডাল, আটা ওজন করে প্যাকেটবন্দি করে রেখে দেওয়া হয়, যাতে খদ্দের এলে ওজন করে, প্যাকেটে ভরতে সময় নষ্ট না হয়। সেই প্যাকেটে কেন্দ্র জিএসটি চাপাতে চাইছে!

প্যাকেটবন্দি ও লেবেল সাঁটা চাল, ডাল, আটা, দুধ, লস্যির মতো খাদ্যপণ্যে মোদী সরকারের ৫ শতাংশ জিএসটি চাপানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিন সোমবার থেকেই বিক্ষোভ চলছে। কারণ ১৮ জুলাই থেকে জিএসটি বাড়ার ফলে প্যাকেটের দুধ, লস্যি, সব কিছুরই দাম বেড়েছে। আজও সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তির সামনে কংগ্রেস ও বিরোধী দলের সাংসদেরা প্যাকেটবন্দি চাল, ডাল, দুধ, লস্যি নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তার পরে লোকসভা ও রাজ্যসভাতেও বিক্ষোভ চলে। সেখানেও বিরোধী সাংসদেরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে, দুধ, লস্যির প্যাকেট হাতে বিক্ষোভ দেখান। কোনও বিল নিয়ে আলোচনা ছাড়াই লোকসভা, রাজ্যসভা সারা দিনের মতো মুলতুবি হয়ে যায়। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা বিরোধীদের সমালোচনা করলেও লাভ হয়নি।

বিরোধীদের তোপের মুখে সীতারামন বলেছিলেন, জিএসটি বিষয়ক সিদ্ধান্তে সব রাজ্যই সায় দিয়েছে। সেই দাবি খারিজ করে কেরল জানিয়েছে, এতে তাদের আপত্তি ছিল। পশ্চিমবঙ্গের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও জানিয়েছেন, তিনি এর বিরোধিতা করেছিলেন। প্রথমে মন্ত্রিগোষ্ঠীর ভার্চুয়াল বৈঠকে, পরে জিএসটি পরিষদেও। কারণ সাধারণ মানুষের উপরে আঘাত আসবে এতে। কিন্তু তাতে কান দেওয়া হয়নি।

আজ চন্দ্রিমার বক্তব্যকে হাতিয়ার করে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রীকে নিশানা করেন। জয়রাম বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, তিনি ও অন্যরা বিরোধিতা করেছিলেন। এখন তাই সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল না-বলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দাবি করছে কেন্দ্র। যখন খুচরো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের উপরে, তখন কর বাড়ানো নিষ্ঠুরতা। না হলে ছোট ব্যবসায়ী, দোকানদার, ক্রেতা, সবাই জিএসটি নিয়ে অভিযোগ করছে?’’

সীতারামনের যুক্তি ছিল, প্রথমে শুধু নামী ব্র্যান্ডের প্যাকেটবন্দি ও লেবেল সাঁটা খাদ্য পণ্যেই জিএসটি ছিল। কর ফাঁকি রুখতে সব রকম প্যাকেটবন্দি ও লেবেল সাঁটা খাদ্যপণ্যেই জিএসটি চাপানো হয়েছে। জয়রামের যুক্তি, নামী ব্র্যান্ডের প্যাকেটবন্দি পণ্যে জিএসটি চাপালে মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে বেশি দাম চোকাতে হয়। সব রকম প্যাকেটবন্দি খাবারেই জিসটি চাপালে গরিব, নিম্নবিত্ত মানুষের উপরেও বোঝা বাড়বে। খোলা খাদ্যপণ্যের বদলে প্যাকেটবন্দি, স্বাস্থ্যকর খাবার কিনতে গেলে কেন তাঁদের বেশি দাম চোকাতে হবে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement