Nitish Kumar

Sushil-Nitish: সুশীল সরে যেতেই ছন্দপতন বিহারে

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বিহার বিধানসভার স্পিকার তথা বিজেপি বিধায়ক বিজয়কুমার সিন্‌হার ভূমিকা।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২২ ০৭:২৯
Share:

সুশীল মোদী এবং নীতীশ কুমার। ফাইল চিত্র।

সুশীল মোদীকে কি খুঁজছেন নীতীশ কুমার!

Advertisement

বিহারে ২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জোটসঙ্গী বিজেপির নেতা সুশীল মোদীকে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে পাশে পেয়ে এসেছিলেন নীতীশ। সুশীল সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ হলেও কট্টর নন। উল্টে মধ্যপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী। তাই বহু ক্ষেত্রেই রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চোখরাঙানি সত্ত্বেও নীতীশের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনও প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়নি সুশীলকে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সংখ্যালঘু মন জয়ে নীতীশের একের পর এক পদক্ষেপ আদৌ ভাল ভাবে নেয়নি সঙ্ঘ পরিবার। এ নিয়ে নীতীশের উপরে চাপ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে সুশীলের কাছে দলের পক্ষ থেকে তদ্বির করা হলেও বিশেষ লাভ হয়নি। নীতীশ ঘনিষ্ঠ জেডিইউয়ের এক নেতার কথায়, ‘‘দু’জনের পারস্পরিক বোঝাপড়া ছিল দেখার মতো। গত ১৫ বছরে দু’দলের মধ্যে হওয়া অধিকাংশ মতানৈক্য নীতীশ-সুশীল কথা বলে নিজেরাই মেটাতেন। ফলে সরকারের কাজে কোনও প্রভাব পড়ত না।’’

২০২০ সালে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে জিতলেও পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো নীতীশকেই মুখ্যমন্ত্রী করে। কিন্তু উপমুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সুশীল মোদীকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দল। সুশীল এখন রাজ্যসভার সদস্য। জেডিইউ শিবিরের মতে, তার পর থেকেই যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত হয়েছে। সুশীলকে সরিয়ে দেওয়ায় দু’দলের মতপার্থক্য মিটিয়ে নেওয়ার জায়গাটি শেষ হয়ে যায়।

Advertisement

যার ফলে বর্তমানে জেডিইউ-বিজেপির অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক কার্যত তলানিতে। যার সূত্রপাত হয় মন্ত্রিসভার পদ বণ্টনকে ঘিরে। প্রথম থেকেই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে আপত্তি ছিল রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের। অমিত শাহের নির্দেশে রাজ্য নেতৃত্ব তা কোনও ভাবে মেনে নিতে বাধ্য হলেও, ছোট শরিক হয়ে জেডিইউয়ের হাতে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক চলে যাওয়া মোটই ভাল ভাবে নেয়নি বিজেপি নেতারা। ফলে সরকারের গোড়া থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি, কাশ্মীর নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হতে দেখা গিয়েছে জেডিইউ নেতৃত্বকে। সম্প্রতি সেই তিক্ততা চরমে ওঠে। বিজেপির আপত্তি সত্ত্বেও নীতীশ জাতপাতের সমীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন বিহারে। অন্য দিকে বিজেপি নেতৃত্ব রাজ্যের আমলাদের ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন জেডিইউ মন্ত্রী-বিধায়কেরা।

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বিহার বিধানসভার স্পিকার তথা বিজেপি বিধায়ক বিজয়কুমার সিন্‌হার ভূমিকা। তাঁর বহু সিদ্ধান্ত ভাল ভাবে নেননি নীতীশ। সূত্রের মতে, স্পিকারকে সরানোর জন্য বহু বার জোটসঙ্গীর কাছে আবেদন জানানো হলেও, কর্ণপাত করেননি বিজেপি নেতৃত্ব। শুধু তাই নয়, জেডিইউ-কে অস্বস্তিতে রাখতে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বিহারে দলের শাখা সংগঠনগুলির দু’দিনের বৈঠক করে বিজেপি। উপস্থিত ছিলেন অমিত শাহ-জেপি নড্ডার মতো শীর্ষ নেতারা। অভিযোগ শক্তি প্রদর্শনের লক্ষ্যেই ওই বৈঠকের জন্য পটনাকে বেছে নেওয়া। পাল্টা বার্তা দিতে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির সম্মানে দেওয়া নৈশভোজ থেকে শুরু করে বর্তমান রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান এড়িয়ে যান নীতীশ। সাম্প্রতিক অতীতে কেন্দ্রের চারটি আমন্ত্রণে অনুপস্থিত থাকেন নীতীশ।

নীতীশের ওই উদাসীনতা ভাল ভাবে নেননি বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। অভিযোগ, তার পরেই নীতীশের দল ভাঙাতে তৎপর হয় বিজেপি। সূত্রের মতে, প্রাক্তন জেডিইউ নেতা আরসিপি সিংহ বিক্ষুব্ধ জেডিইউ নেতা তথা বিহার বিধানসভা পরিষদের সদস্য অশোক চৌধরিকে দিয়ে মহারাষ্ট্র মডেলে জেডিইউ দলে ভাঙন ধরাতে তৎপর হয় বিজেপি। রাজনীতির অনেকের মতে, বিজেপি যে দল ভাঙাতে তৎপর হয়েছে তা বুঝেই দলীয় বিধায়কদের ধরে রাখতে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকেছেন নীতীশ কুমার। আগামিকাল পটনায় হতে যাওয়া ওই বৈঠকে নীতীশ জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেবেন কি না, তা জানতে প্রহর গুনছে সব শিবিরই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement