মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফতে অল সিসি। ছবি: রয়টার্স।
প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে উপস্থিত থাকাই শুধু নয়। মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফতে অল সিসি-র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে এই আরব দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দিক তৈরি হল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। মিশরের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতকে লগ্নির আহ্বান জানান সিসি।
যৌথ ঘোষণাপত্রে জানানো হয়েছে, ভারত এবং মিশর কৌশলগত সম্পর্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিশরই আরব জগতের দ্বিতীয় দেশ (সংযুক্ত আরব আমিরশাহির পরে), যার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরিতে এগোচ্ছে ভারত। প্রতিরক্ষা থেকে অর্থ লগ্নি, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি— সব ক্ষেত্রেই সহযোগিতার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, সে দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতকে লগ্নির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন অল সিসি।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, মিশরে চিনের বিনিয়োগ বিপুল ভাবে বাড়ছে। এটাও খেয়াল রাখা হচ্ছে যে ভূকৌশলগত ভাবে মিশরের অবস্থান ইউরোপ, আফ্রিকা আর পশ্চিম এশিয়ার সংযোগস্থলে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অতি গুরুত্বপূর্ণ পথ, সুয়েজ় খাল মিশরই নিয়ন্ত্রণ করে। এই ভূকৌশলগত অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতিকে নানা ভাবে প্রভাবিত করার সুযোগ থাকে মিশরের। মধ্যমপন্থী সুন্নি আরব দেশগুলির সঙ্গে জোট গড়লে তা পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার রণনীতিতে ভারতের জন্য সুবিধাজনক। মিশরের পাশাপাশি এই একই কারণে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গেও মৈত্রীর পথে হেঁটেছে মোদী সরকার। এখানে চিনের তুলনায় ভারত এখনও অনেক পিছিয়ে থাকলেও সুয়েজ়ে ভারতের সরকারি ও বেসরকারি শিল্পসংস্থাগুলির বিনিয়োগের খুব বড় অবকাশ ও সুযোগ আছে বলেই মনে করে নয়াদিল্লি। চিনের নতুন বিদেশমন্ত্রী আফ্রিকা সফরের শেষ ধাপে দিন দশেক আগে কায়রো ঘুরে এসেছেন।
মিশরের সঙ্গে ভারতের ১৯৭৮ সাল থেকেই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মিশর এমন একটি মুসলিম দেশ যারা বরাবরই পাকিস্তানের নীতি ও সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে আসছে।
অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজের মঞ্চেও অনেক বার মিশরের আপত্তিতে ভারত-বিরোধী প্রস্তাব গৃহীত হয়নি, কিংবা কাশ্মীর নিয়ে বিবৃতির সুর নরম করতে হয়েছে। যে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস ভারতের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কারণ, সিসি ও মোদী দিল্লিতে একযোগে তার নিন্দাও করেছেন।