Durga Puja 2023

দেবীর আরাধনা ফিরিয়ে দেয় ঘরে ফেরার আমেজ

বেলান্দুরের ওই পুজোর মতোই মহালক্ষ্মীপুরম লে আউটের কাছে নর্থ ব্যাঙ্গালোর কালচারাল সমিতির পুজোও নজরকাড়া।

Advertisement

পিনাকী চক্রবর্তী

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৯
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মহালয়ার পরেই কলকাতা-সহ গোটা বঙ্গের বাতাসে পুজোর আমেজ। প্রায় ১৯০০ কিলোমিটার দূরে বেঙ্গালুরুর প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যেও দেবী দুর্গার আরাধনার প্রস্তুতি চরমে। কোথাও শেষ মুহূর্তে প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। আবার কোথাও প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।

Advertisement

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ওড়িশা, অসম, বিহার, ত্রিপুরা থেকে এ শহরে আসা বাঙালিরাও কর্মসূত্রে দক্ষিণের এই শহরে এসেছেন। ক্রমশ শহরকে যেমন আপন করে নিয়েছেন, তেমনই বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত দুর্গাপুজোর আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তার জেরেই গত দু’দশকে ক্রমশ বেড়েছে পুজোর সংখ্যা। প্রতিমা, থিম, আলোকসজ্জা, পুজোর আচার, ভোগ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মিশেলে অনেক ক্ষেত্রেই এখানকার জৌলুস নজর কাড়ে।

গোটা শহরে পুজোর সংখ্যা শ’দুয়েকের কাছাকাছি। কলকাতার মতো এ শহরেও সাবেকি পুজোর পাশাপাশি নজর কেড়েছে থিম পুজো। এখানকার উল্লেখযোগ্য পুজোর মধ্যে রয়েছে বর্ষা বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন, এইচএসআর লে আউট, হোয়াইটফিল্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, আগমনী, দ্য বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন।

Advertisement

নজরকাড়া পুজোগুলির অন্যতম বেলান্দুরের গ্রিন গ্লেন লেআউট কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। বেলান্দুরের গ্রীন গ্লেন লেআউট এলাকার বাসিন্দাদের প্রাণের টানই সবাইকে একত্রিত করে রেখেছে। দুর্গার আরাধনা এখানে সদাচার, সাবেকিয়ানা ও বন্ধুত্বের পরিমণ্ডলে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে গত সাত বছর যাবৎ। তাই বলে কি থিম থেমে থাকে? তা-ও নয় । তবে থিমের মাধ্যমে কিছু প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে পুজোর আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত শুভ্র গোস্বামী গত কয়েক বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে। তাঁর কথায়, “এখানে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে। দুর্গাপুজোর সঙ্গে নবরাত্রি, ডান্ডিয়া মিলে যায়।”

গত বার এই পুজোর থিম ছিল ‘ডলস অব ইন্ডিয়া’। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পুতুল এনে মণ্ডপ সাজানো হয়েছিল। তার আগে সত্যজিৎ রায় স্মরণেও থিম তৈরি করা হয়। শুভ্র বলেন, “এ বছরের থিম ‘কর্তাবাবুর পুজো’। বনেদি বাড়ির পুজোর পরিমণ্ডল ও আচার তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশাল থামের দুর্গামণ্ডপে একচালার প্রতিমা পুজো আর গড়গড়া মুখে আরামকেদারায় বসে গৃহকর্তার পুজো পরিচালনার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।”

বেলান্দুরের ওই পুজোর মতোই মহালক্ষ্মীপুরম লে আউটের কাছে নর্থ ব্যাঙ্গালোর কালচারাল সমিতির পুজোও নজরকাড়া। গত বার যামিনী রায়কে থিম হিসাবে তুলে ধরেছিলেন উদ্যোক্তারা। এ বারেও অভিনব ভাবনা তুলে ধরছেন তাঁরা। আগেকার দিনে রাজাদের যে চিঠি পাঠানো হত, সেই চিঠি খুলে ‘স্ক্রল’ করে পড়তে হত। সেই ধাঁচেই এ বার চণ্ডীপাঠের শ্লোক ‘স্ক্রল’-এর মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।

১৯৭৮ সাল থেকে এই পুজো শুরু। এ বারে ৪৬ বছর পুর্তি। এ বছর প্রতিমা তৈরির জন্য কুমোরটুলি থেকে বেঙ্গালুরু নিয়ে আসা হয়েছে শিল্পী তরুণ পালকে। এই পুজোর আর এক আকর্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পঞ্চমী থেকেই পুজোর ঢাকে কাঠি। সে দিন আনন্দমেলার আয়োজন করা হয়েছে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলবে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুজোর সাংস্কৃতিক সচিব কল্যাণ পাঠকের সঙ্গে এই পুজোর যোগ মাত্র দু’বছরের। অল্প দিনেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। কল্যাণের কথায়, “২০২২-এর জানুয়ারিতে দিল্লি থেকে বেঙ্গালুরু এসেছিলাম। বরাবরই আমি সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। এখানে আসার পরে ইন্টারনেটে এই পুজোর খোঁজ পাই। তার পরে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যেতেই ক্রমশ নিবিড় যোগাযোগ তৈরি হয়। তবে আমার সেই সময়ে মনে হয়েছিল, এখানে এত বড় বহরে পুজো হয়, কিন্তু সেই অর্থে স্থানীয় গণ্ডির বাইরে এর পরিচিতি কম। তার পরেই আমি প্রচারের দায়িত্ব নিই।” পুজোর পাঁচ দিনের মধ্যে স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি কলকাতার শিল্পীরাও পারফর্ম করবেন। বিপুল ভোগেরও ব্যবস্থাও করা হয়। এ ছাড়া ২৪টি স্টল রয়েছে। সেখানে খাবারের পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। দেদার মজা, ভোগ, অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বেঙ্গালুরুর পুজো বিস্তার লাভ করেছে। পরবাসেও যেন বঙ্গভূমির স্বাদ ফিরে আসে দেবীর আরাধনায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement