রাজনৈতিক জমি কাড়াকাড়িতে নেমে পড়েছে শাসক দল টিআরএস এবং বিরোধী দল বিজেপি। ফাইল চিত্র।
আগামিকাল হায়দরাবাদ মুক্তি দিবস। ১৯৪৮ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করেছিলেন হায়দরাবাদের তৎকালীন নিজাম, স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় হায়দরাবাদ। সেই উপলক্ষে রাজনৈতিক জমি কাড়াকাড়িতে নেমে পড়েছে শাসক দল কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের টিআরএস এবং বিরোধী দল বিজেপি। আজ রাতেই হায়দরাবাদ পৌঁছে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি আগামিকাল সেকেন্দ্রাবাদের সেনা প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। বাম শিবিরের অভিযোগ, মুসলিম শাসক নিজামের হাত থেকে মুক্তি— এমন বার্তা দিয়েই হিন্দু ভোট মেরুকরণের লক্ষ্য নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
আগামী বছরের শেষে তেলঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচন। বিরোধীদের অভিযোগ, ওই ভোটের কথা ভেবেই এ বারে মুক্তি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বিজেপির। কারণ, মোদী সরকারের গত আট বছরের আমলে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে কোনও দিনই হায়দরাবাদ মুক্তি দিবস উপলক্ষে প্রচারে নামতে দেখা যায়নি। রাজনীতির অনেকের মতে, তেলঙ্গানায় জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছে বিজেপি। ওই রাজ্যে রাওয়ের সরকারি নীতি, স্বজনপোষণ, দুর্নীতির কারণে ক্ষুব্ধ আমজনতার বড় অংশ। সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগও রয়েছে। সেই ক্ষোভকেই কাজে লাগাতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। গত দু’মাসে অমিত শাহের এটি চতুর্থ তেলঙ্গানা সফর।
আগামিকাল সেনা প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজেপির অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে পার্শ্ববর্তী বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীদের। কাল শাহ তাঁর বক্তৃতায় জাতীয়তাবাদের বার্তা দেওয়ার সঙ্গেই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা করবেন বলেই আশঙ্কা বিরোধীদের। স্বাধীনতার ঠিক এক বছর পরে, দিল্লির চাপে তৎকালীন নিজাম ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়া থেকে আত্মসমর্পণ—এই এক বছরে নিজামের বাহিনীর অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছিল স্বাধীনতাকামীদের। সিপিএম নেতৃত্বের আশঙ্কা, মুসলিম শাসকদের থেকে মুক্তি পাওয়া গিয়েছিল, এমন বার্তা প্রচারই লক্ষ্য শাহের। বিজেপির মতোই এই প্রথম মুক্তি দিবস উপলক্ষে বাইকে ‘তিরঙ্গা যাত্রা’র সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হায়দরাবাদের এমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। অনেকের মতে, ওই যাত্রা আখেরে হিন্দু ভোটকে একজোট হতে আরও সাহায্য করবে।
পিছিয়ে নেই শাসক দলও। শাহের জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাওয়ের আমন্ত্রণ থাকলেও সেখানে তিনি যাচ্ছেন না বলে জানিয়ে দিয়েছে টিআরএস। পরিবর্তে পাবলিক গার্ডেনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। আগামী তিন দিন তেলঙ্গানা সংহতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসক দল। টিআরএসের অভিযোগ, রাজ্যে বিভাজনের রাজনীতি করতে, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি নষ্ট করতেই বিজেপি মুক্তি দিবস পালনে এত তৎপর। সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা দিতেই আগামী তিন দিন সংহতি দিবস পালন করবে দল।