ফাইল চিত্র
কখনও বিএমডব্লিউ-তে পা তুলে দাঁড়িয়ে, কোথাও হাতে দু’হাজারের নোটের তোড়া। কোনও ছবিতে আবার খালি গায়ে সোনার গয়না পরে বৈভব প্রদর্শন। সামাজিক মাধ্যমে ক্ষমতা ও বৈভবকে তুলে ধরে একাধিক ছবি দিয়েছিল জহাঙ্গিরপুরী হিংসায় মূল অভিযুক্ত শেখ আনসার। ওই বিপুল সম্পত্তি কেবল লোহার ছাঁটের ব্যবসা করে, না কি এর পিছনে অবৈধ লেনদেনও রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে এ বার আনসারের বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনে (পিএলএমএ) মামলা দায়ের করল ইডি।
তদন্তকারীদের মতে, সম্প্রতি বিদেশ থেকে বেশ বড় মাপের অর্থ আনসারির কাছে পাঠানো হয়েছিল। সেই অর্থ হনুমান জয়ন্তীর দিনে ঝামেলা পাকানোর জন্য ব্যবহার হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত শনিবার জহাঙ্গিরপুরী দিয়ে হনুমান জয়ন্তীর একটি শোভাযাত্রা যাওয়ার সময়ে অশান্তি ও সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসাবে গ্রেফতার হন আনসার। পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ার ওই বাসিন্দা দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে দিল্লির জহাঙ্গিরপুরীর বাসিন্দা। পেশায় লোহার ছাঁটের ব্যবসায়ী। গতকাল ওই মামলায় রোহিণী-তে ক্রাইম ব্রাঞ্চের দফতরে গিয়ে আনসারকে প্রায় তিন ঘণ্টা জেরা করেন খোদ দিল্লি পুলিশের কমিশনার রাকেশ আস্থানা। দিল্লি পুলিশ সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদেই বিদেশ থেকে আনসারের কাছে অর্থ সাহায্য আসার বিষয়টি সামনে আসে। তার ভিত্তিতেই ইডি-কে ওই অর্থের উৎস জানতে তদন্তের অনুরোধ করেন আস্থানা।
সূত্রের খবর, বিভিন্ন সময়ে বিদেশ থেকে আর্থিক সাহায্য এসেছে আনসারের নামে। সেই অর্থ কারা পাঠিয়েছে, কেন পাঠিয়েছে, সেই অর্থ গত শনিবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ঝামেলা পাকানোর জন্য ব্যবহার হয়েছে কি না, তা দেখা শুরু হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে আনসারের মোবাইল কলরেকর্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন। জহাঙ্গিরপুরীর হিংসার মামলায় ইতিমধ্যেই শেখ আনসার-সহ মোট ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দায়ের করা হয়েছে সাতটি অভিযোগ। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল রেকর্ডিং, মুখ শনাক্তকরণ প্রযুক্তির ব্যবহারে আরও ২৭ জনকে হিংসায় উস্কানি ও জড়িত থাকার অপরাধে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করা হবে।
এ দিকে ওই ঝামেলার পরেই জহাঙ্গিরপুরী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছিল বিজেপি শাসিত উত্তর দিল্লি পুর নিগম। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপেই যা থামে। ওই উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত। আজ দিল্লির বিধায়ক আপের সৌরভ ভরদ্বাজ অভিযোগ করেন, ‘‘মেরুকরণের লক্ষ্যেই ওই অভিযানে নেমেছিল পুর নিগম। বেছে বেছে কেবল সংখ্যালঘুদের দোকান ও ঘরকেই নিশানা করা হয়েছিল।’’ পাল্টা আক্রমণে দিল্লির রাজ্য বিজেপি সভাপতি আধেশ গুপ্তের কটাক্ষ, ‘‘ন্যায়ের প্রতীক ওই বুলডোজ়ারের যাত্রা চলবে। আসলে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের ভোট হারানোর ভয়েই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আম আদমি পার্টির নেতারা।’’