National News

ফের ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি! ৬-৭ বছর আরবিআই-কে ভুল তথ্য দিয়ে কারচুপি, সঙ্কটে পিএমসি

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘ঋণের অঙ্কটা যেহেতু বিশাল বড় এবং সেটা এনপিএ হিসেবে দেখালে তাতে সংস্থার লভ্যাংশের উপর প্রভাব পড়ত। তাতে নষ্ট হতে পারত সংস্থার সুনাম। যেহেতু আগে অনেক ক্ষেত্রে দেরিতে হলেও ঋণ শোধের নজির রয়েছে এইচডিআইএল-এর, তাই আমরাও উপর্যুপরি এই সংস্থার সব অ্যাকাউন্টকে স্ট্যান্ডার্ড অ্যাকাউন্ট হিসেবেই দেখিয়ে এসেছি।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৯ ২০:১০
Share:

—ফাইল চিত্র।

পিএনবি-র পর এ বার কি পিএমসি? ফের সামনে এল বড়সড় ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি। টানা ছ’-সাত বছর ধরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চোখে ধুলো দিয়ে হিসেবে গরমিল দেখিয়ে গিয়েছে পঞ্জাব-মহারাষ্ট্র কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক। আরবিআই-এর পাশাপাশি ব্যাঙ্কের পরিচালন বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট কাউকে কিছু না জানিয়েই হাউজিং ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড (এইচডিআইএল)-এর প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণকে নন প্রফিটেবল অ্যাসেট (এনপিএ) হিসেবে দেখাননি ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয় টমাস। রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিঠি লিখে গোটা বিষয়টি স্বীকার করে টমাসের বক্তব্য, ব্যাঙ্কের সুনাম ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাতেই এ সব করা হয়েছে। কোনও দুর্নীতি হয়নি, দাবি টমাসের।

Advertisement

আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে রিয়েল এস্টেট সংস্থা এইচডিআইএল। পিএমসি ব্যাঙ্কের কাছে এই সংস্থার দেনা গত কয়েক বছরে বাড়তে বাড়তে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু আগে থেকে তার বিন্দু-বিসর্গও আঁচ করতে পারেনি আরবিআই। কারণ, বছরের পর বছর ধরে ব্যাঙ্কের এমডি এই সংস্থার অ্যাকাউন্টকে সন্দেহের তালিকায় রাখেননি। বরং আরবিআই-কে ভাল অ্যাকাউন্ট হিসেবেই দেখিয়ে এসেছে। কিন্তু এইডিআইএল বর্তমানে চরম আর্থিক সঙ্কটে। ওই ঋণও ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা যখন কার্যত শেষ হয়ে আসছে। ফলে সঙ্কট ঘনিয়ে আসছে পিএমসি ব্যাঙ্কেও। তখনই সামনে চলে এসেছে ছ’-সাত বছর ধরে চলে আসা কেলেঙ্কারি।

এই দুর্নীতির আঁচ পেয়েই পিএমসি ব্যাঙ্ক থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে জয় টমাসকে। এফআইআর-এও নাম রয়েছে টমাসের। আর সেই সময়ই আরবিআই-কে লেখা ছ’পাতার একটি চিঠি লিখেছেন এবং নিজের মতো করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘ঋণের অঙ্কটা যে হেতু বিশাল বড় এবং সেটা এনপিএ হিসেবে দেখালে তাতে সংস্থার লভ্যাংশের উপর প্রভাব পড়ত। তাতে নষ্ট হতে পারত সংস্থার সুনাম। যে হেতু আগে অনেক ক্ষেত্রে দেরিতে হলেও ঋণ শোধের নজির রয়েছে এইচডিআইএল-এর, তাই আমরাও উপর্যুপরি এই সংস্থার সব অ্যাকাউন্টকে স্ট্যান্ডার্ড অ্যাকাউন্ট হিসেবেই দেখিয়ে এসেছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: এ বার ট্রেন লেট হলেই ক্ষতিপূরণ! প্রবণতা ভেঙে তেজস এক্সপ্রেসে চালু করছে আইআরসিটিসি

অবশ্য শুধু এইচডিআইএল-এর নয়, অনেক খারাপ পারফর্ম করা অ্যাকাউন্টও ভাল হিসেবে দেখানো হয়েছে। সেই সব অ্যাকাউন্টের ঋণ এবং তার সঙ্গে সুদ মিলিয়ে ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছেছে। কিন্তু সবটাই গোপন রাখা হয়েছে পরিচালন বোর্ড, অডিটর এবং আরবিআই-সেবির মতো নিয়ন্ত্রকদের। টমাসের দাবি, সবটাই করা হয়েছে সুনামের ক্ষতির আশঙ্কা এবং তা থেকে বাঁচতে।

এইচডিআইএল-র এই বিপুল ঋণের অঙ্ক নিয়ে টমাসের সাফাই, ‘‘জমি-বাড়ির ব্যবসার জন্য তারা (এইচডিআইএল) মাঝেমধ্যেই বিপুল অঙ্কের ওভারড্রাফট করত। কিন্তু মোটামুটি একটা নির্দিষ্ট মেয়াদের পর সেটা আবার সুদ সমেত ফেরতও দিত। এই ওভারড্রাফ্টের জন্য আমাদের ব্যাঙ্ক ১৮ থেকে ২৪ শতাংশ হারে সুদ নিত। তাতে ব্যাঙ্কের ভাল আয়ও হয়েছে।’’ চিঠিতে টমাস আরও উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালে সন্দেহ হওয়ায় এই সব অ্যাকাউন্ট নিয়ে আরবিআই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তখন আবার তার বদলে ডামি অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়, জানিয়েছেন টমাস।

কিন্তু পিটিআই-এর একটি সূত্রে খবর, এইচডিআইএল-এর ঋণ ৬৫০০ কোটি নয়, প্রায় ৮৮৮০ কোটি টাকা। এই হিসেব এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, যা সংস্থার মোট ঋণের প্রায় ৭৩ শতাংশ। ২০০৬-০৭ সালে এই পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি এবং ২০১১ সালে ছিল ১০২৬ কোটি টাকা। তবে এই গোটা কেলেঙ্কারির দায় নিজের কাঁধেই নিয়েছেন টমাস। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘এতে এগ্‌জিকিউটিভদের কোনও ভূমিকা নেই। তাঁরা শুধু আমার কথা মতো কাজ করেছেন।’’ তবে একই সঙ্গে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেছেন, ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের টাকা ডুববে না।

আরও পড়ুন: কোনও শরণার্থীকে ভারত ছাড়তে হবে না, কোনও অনুপ্রবেশকারীকে ভারতে থাকতে দেব না: অমিত শাহ

পিএনবি-তে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদী এবং তাঁর মামা মেহুল চোক্সী। পিএমসি-র সঙ্গেও তেমন কিছু ঘটতে পারে আশঙ্কা করে গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পিএনবি-র নাম না করেও সেই আশঙ্কা দূর করতে টমাস বলেছেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা দুর্নীতি নয়, কেউ টাকা নিয়ে পালিয়ে যাননি। এটা পদ্ধতিগত বিষয়। যা আরও ভাল ভাবে মেটানো যেতে পারত।’’ এ কথা বলে কার্যত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘাড়েই দোষ চাপাতে চেয়েছেন টমাস।

অন্য দিকে গ্রাহকদের আতঙ্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। টুইটারে একটি বিবৃতিতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় কিছু ব্যাঙ্ক নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। তাতে গ্রাহকদের উদ্বেগ বেড়েছে। আরবিআই নিশ্চিত করে সাধারণের উদ্দেশে জানাচ্ছে যে ভারতীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা সুরক্ষিত ও শক্তিশালী। আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এই ধরনের গুজবের কোনও ভিত্তি নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement