প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।
প্রায় এক দশক আগে প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েই ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ স্লোগান তুলেছিলেন তিনি। ধর্ম এবং জাতপাত ভিত্তিক বিভাজনের গন্ডী ছাড়িয়ে দেশের সব মানুষের উন্নয়নের কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পদে তৃতীয় মেয়াদের জন্য লোকসভা ভোটের মুখোমুখি হওয়ার আগে নরেন্দ্র মোদীর মুখে বহুত্ববাদের পাশাপাশি শোনা গেল আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বার্তা। তাঁর দাবি, গোটা বিশ্বের সব দেশই এখন একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদী বলেন, ‘‘শুধু পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্তই নয়, গোটা বিশ্ব এখন পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। এই বাস্তব পরিস্থিতি আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে, পূর্বশর্ত চাপিয়ে দিয়ে কোনও সমস্যার সমাধান হবে না। সহমতের ভিত্তিতেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আমরা এখন বহুত্ববাদের যুগে বাস করছি।’’ প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে জি২০ শীর্ষবৈঠকেও ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর কথা বলেছিলেন মোদী।
তবে এরই পাশাপাশি সাক্ষাৎকারে মোদীর ইঙ্গিত দিয়েছেন, বহুত্ববাদ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মোকাবিলা করা হবে। ব্রিটিশ সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘একটি পক্ষ স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে সম্পাদকীয়, টিভি চ্যানেল এবং সমাজমাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’’
ঘটনাচক্রে, চলতি বছরেই মোদীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে ব্রিটেনেরই সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্যচিত্র নিষিদ্ধ করেছিল কেন্দ্র। ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চন’ শীর্ষক তথ্যচিত্রে ২০০২ সালের গোধরা পরবর্তী গুজরাত দাঙ্গায় সে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। শীতকালীন অধিবেশনে সংসদ ভবনের নিরাপত্তা লঙ্ঘন নিয়ে বিরোধীরা তাঁর বিবৃতি দাবি করলেও মোদী লোকসভা বা রাজ্যসভায় কোনও বিবৃতি দেননি। এই পরিস্থিতিতে অধিবেশন চলাকালীন বিদেশি সংবাদপত্রে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী শিবির।
মোদী তাঁর দল বিজেপির বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর দমন পীড়নের অভিযোগও খারিজ করেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিশ্বের অন্য অনেক দেশে নিপীড়িত মুসলিমরা ভারতকে ‘নিরাপদ স্বর্গ’ মনে করেন। এ দেশেই সুখে, সমৃদ্ধিতে তাঁরা বাস করেন। ভারতীয় সমাজে কোনও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাব নেই।’’ এ প্রসঙ্গে তাঁর সমালোচকদের খোঁচা দিয়ে মোদীর মন্তব্য, ‘‘ওঁদের তো মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।’’
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেই ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করেছিল মোদী সরকার। সে সময়ে সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে একাধিক মামলা হয়। গত সোমবার এ সংক্রান্ত একটি রায়ে সরকারের অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহার বৈধ বলে জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। সাক্ষাৎকারে মোদী সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আইন এবং সংবিধানের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার কথা বলেছেন।
বিদেশে ভারত বিরোধী কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলির তৎপরতা নিয়েও সাক্ষাৎকারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘মুখে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের কথা বলে ওই সংগঠনগুলি হুমকি, ভীতি প্রদর্শন এবং হিংসা ছড়ানোর কাজ চালাচ্ছে।’’ কানাডার পাশাপাশি সম্প্রতি আমেরিকা এবং ব্রিটেনেও খলিস্তানপন্থী নিষিদ্ধ সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)-র তৎপরতা দেখা গিয়েছে। খলিস্তানিদের হামলার শিকার হয়েছে ভারতীয় দূতাবাস। তবে ওই সব ঘটনার জেরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না বলেও দাবি করেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘ভারত এবং আমেরিকার সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি হল সন্ত্রাস মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতা।’’
কানাডায় খলিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জর খুনের ঘটনার ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ এর ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। এসএফজে প্রধান গুরুপতবন্ত সিংহ পন্নুনকে খুনের চেষ্টায় ভারতের গোয়েন্দাদের জড়িত থাকার অভিযোগ সম্প্রতি উঠেছে আমেরিকা থেকেই। সংসদের অধিবেশন বা কোনও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে কিছু না বললেও বিষয়টি নিয়ে প্রথম বার মোদী মুখ খুলেছেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের সামনে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভারত সব সময়ই আইনের শাসনের প্রতি দায়বদ্ধ। দেশের কোনও নাগরিক যদি কিছু করে থাকেন, তা হলে সরকার তা খতিয়ে দেখবে।’’