প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
‘বিজয় নয়, বিনয়’। ‘বিবাদ নয়, সমাধান’। ‘রাম কারও একার নন, রাম সবার’।
২২ জানুয়ারি রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’র পর এই নতুন রাজনৈতিক ভাষ্য তৈরি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজধানীর রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, আসন্ন লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এক দিকে যেমন তিনি শুধুমাত্র রামমন্দিরের আবেগের উপর নির্ভরশীল না হয়ে দেশের অর্থনীতি, পরিকাঠামো উন্নয়নের স্বপ্নকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন, তেমন রামকে শুধুমাত্র সঙ্ঘ পরিবার বা বিজেপির কট্টর হিন্দু বলয়ের মধ্যে আটকে না রেখে উদারতার বার্তাও সুকৌশলে দিচ্ছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। তাদের মতে, এ কাজ করতে পারেননি তাঁর পূর্বসূরি লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীরাও।
মোদী গত কাল বলেছেন, ‘‘রাম থেকে রাষ্ট্র।’’ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনি রাম তথা রামমন্দিরকে কাজে লাগিয়ে ভোটের আগে আর নতুন করে মেরুকরণ করতে চাইছেন না। হিন্দু ভোট তথা উত্তর ভারতে জয়ের প্রশ্নে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মোদী এ বার চাইছেন এই মন্দিরকে প্রতীক করে গোঁড়া হিন্দুত্বের বাইরের বলয়কেও ছুঁতে।
সম্প্রতি শিয়া মুসলিমদের সঙ্গে সংযোগের চেষ্টা করেছেন তিনি। ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাতে’ সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমদাবাদে রোড শো করেছেন, যা সেখানে এক সময় ভাবাও যেত না। সেই রোড শো’য়ে উপচে পড়েছেন বোহরা মুসলিমেরা। রামমন্দিরের উদ্বোধনেও মুসলিম সমাজের একাংশকে সঙ্গে নেওয়ার প্রকাশ্য চেষ্টা দেখা গিয়েছে মোদী সরকারের তরফে। তিন তালাক বিল পাশ করানো মোদী সরকার মুসলিম সমাজের মহিলাদের মন জয়ের প্রশ্নে আশাবাদী। শুধু তাই নয়, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু অংশকেও বার্তা দিতে চাইছেন মোদী—রাম সবার, এই কথা বলে।
অযোধ্যায় আসার আগে বার বার দক্ষিণ ভারতে গিয়েছেন মোদী। বিশেষ মান্যতা দিয়েছেন তামিলনাড়ুর রামসেতুকে। এ সবই রামের প্রতীককে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক মহল। আডবাণীর রথযাত্রার পর গত কয়েক দশক ধরে রামমন্দির চিহ্নিত হয়ে থেকেছে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের অনুঘটক হিসাবে। আর আজ প্রধানমন্ত্রী যখন রামমন্দির প্রসঙ্গে ‘বিনয়ের’ কথা বলছেন, তখন অনেকেরই ব্যাখ্যা, দীর্ঘ দিনের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। কারণ, দেশভাগের রক্তক্ষয়ী অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে স্বাধীন হওয়া একটি দেশে, রামমন্দির আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ক্ষত বাড়িয়েছে
বই কমায়নি।