ফাইল চিত্র।
অতিমারির তিন ধাক্কা পার করে দেশের অর্থনীতির চাকায় গতি ফিরতে শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু কাজের বাজারে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে কি? উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অন্তত তা বলছে না। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গত রবিবার শেষ হওয়া সপ্তাহে সারা দেশে বেকারত্ব ফের মাথা তুলেছে ৮.৪৯ শতাংশে। যেখানে আগের সপ্তাহে তা ৭.১৪% ছিল। শহরে তা ৬.৭১% থেকে চড়েছে ৭.৭৬ শতাংশে, গ্রামে ৭.৩৪% থেকে ৮.৮২%। ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়া সপ্তাহে বেকারত্ব এর চেয়ে বেশি ছিল।
দু’বছর আগে করোনা ঠেকাতে হওয়া লকডাউনে কার্যত স্তব্ধ হয়েছিল দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্র। সংগঠিত ক্ষেত্রেও কাজ হারান অনেকে। ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসে বেকারত্ব ২০% পার করে। অর্থনীতি সচল হওয়ার পর তা দু’অঙ্কের নীচে নামলেও অতিমারির আগের ফেরেনি।
বিশেষজ্ঞদের অনেকের বক্তব্য, অতিমারির ঢেউ মাথা নামানোর পর সংস্থাগুলি লোক নিয়োগ বাড়াবে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। গত বাজেটে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ কমিয়েছে কেন্দ্র। তাতেও কাজ কমেছে। বণিকসভা ভারত চেম্বার অব কমার্সের ফার্স্ট প্রেসিডেন্ট সীতারাম শর্মার বক্তব্য, উঁচু বেকারত্বের জন্য কেন্দ্র ও বেসরকারি ক্ষেত্র, দু’পক্ষকেই দায় আছে। তিনি বলেন, ‘‘সুদ বৃদ্ধির ফলে শিল্পের মূলধন জোগাড়ের খরচ বেড়েছে। তারা না করছে নতুন প্রকল্পে লগ্নি, না করছে পুরনো প্রকল্প সম্প্রসারণ। অদূর ভবিষ্যতেও চাহিদা বৃদ্ধির আশা দেখছে না। সে কারণে নিয়োগও কার্যত বন্ধ।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘সরকারি উদাসীনতাও এইঅবস্থার কারণ। আগে প্রতিরক্ষা, রেলও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি ছিল কাজের অন্যতম জায়গা। তা এখন কমেছে। বহু সংস্থাকে বিলুপ্ত করা হয়েছে।’’ আইআইএম কলকাতার প্রাক্তন অধ্যাপক অনুপ সিন্হা বলেন, ‘‘অতিমারিতে মানবসম্পদ কমিয়ে কাজ চালানোর পথ খুঁজছিল বহু সংস্থা। শ্রমিকের একাংশের বিকল্প হিসেবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছে। ফলে নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। এমনকি, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বদলে কম সময়ের নিয়োগ বেড়েছে।’’ অনেকে বলছেন, এক সময়ে বহু মানুষ হতাশ হয়ে কাজ খোঁজা ছেড়েছিলেন। এখন তাঁরা কাজের বাজারে ফিরতে চেষ্টা করলেও সে অনুপাতে কাজ নেই।