শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভবানন্দ বরবায়েন। — নিজস্ব চিত্র
ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্রীয়া নৃত্যে স্নাতকোত্তর প্রথম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীরা উত্তীর্ণ হওয়ার অনেক আগে স্পেনের এক মহিলা ওই ডিগ্রি দখল করেছিলেন। এ বার নিজের শহর লিয়নে সত্রীয়া নাচের স্কুল খুললেন তিনি। ভারতের স্পল্প পরিচিত ধ্রুপদী নৃত্যশৈলী শিখতে পাঁচ জন পড়ুয়াও জুটেছে তাঁর!
৩২ বছরের ফালফান ব্রিজুয়েলা অলিভিয়া বেৎজাভেল আপাতত মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনোমাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিষ্ণুর দশাবতার, পুরাণ ও সত্রীয়া নৃত্য নিয়ে গবেষণা করছেন। ফের অসমে এসেছেন অলিভিয়া। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব কলাক্ষেত্রে অঙ্কীয় ভাওনা ‘রাম বিজয়’ নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করতে এসেছে প্যারিসের দল। তার সঙ্গেই এসেছেন অলিভিয়া।
তিনি জানান, ২০১০ সালে মাজুলির কমলাবাড়ি সত্রের বিশেষজ্ঞ ভবানন্দ বরবায়েন ফ্রান্সে সত্রীয় নৃত্যের কর্মশালা করেছিলেন। তখনই সত্রীয়া নাচে মুগ্ধ হন অলিভিয়া। তাঁর মতে, নৃত্যের মাধ্যমে আধ্যাত্মবাদ ও শিল্প এমন একাকার হতে পারে সেই ধারণা আগে তাঁর ছিল না। তাঁর দেশে মূলত সালসা নাচেরই প্রাধান্য। সেখানে দেহচর্চা হলেও মনের শান্তি আসে না। তখন থেকেই অলিভিয়ার সত্রীয়া নাচের চর্চা শুরু। বরবায়েন প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি’। তাঁর তদারকিতেই প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সত্রীয়া নাচে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান অলিভিয়া। এখন সেই বরবায়েনের ত্বত্ত্বাবধানেই তাঁর পিএইচডি চলছে। সেই সঙ্গে লিয়নে স্কুল খুলে সত্রীয় নাচের ক্লাসও চালাচ্ছেন অলিভিয়া। এখন পাঁচ জন ছাত্রছাত্রী এলেও তাঁর আশা, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়বে।
শুধু অলিভিয়া নন, পর্তুগাল, জার্মানি, স্পেন, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম ও কলম্বিয়ার ১২ জন শিল্পীকে তৈরি করেছেন ভবানন্দ। ব্রজবুলিতে লেখা শ্রীমন্ত শঙ্করদেব বিরচিত দু’ঘণ্টার অঙ্কীয় নাট বা ভাওনাটি স্পেনিয় ভাষায় অনুবাদ করেছেন অলিভিয়া। কলাক্ষেত্রের উপস্থাপনায় বিদেশি দলকে যোগ্য সঙ্গত করেন মাজুলির শিল্পী ও বাদ্যযন্ত্রীরা।
প্রতি বছরই রাস বা বিহুর সময় বিদেশ থেকে অনেক নৃত্যপ্রেমী মাজুলিতে আসেন। বড়বায়েন জানান, বিভিন্ন দেশে শিক্ষক হিসেবে গিয়ে বিদেশি মেয়েদের মধ্যে ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যশৈলী বিশেষ করে সত্রীয়া নাচের প্রতি আগ্রহ দেখেছেন তিনি। তাই বিদেশে কর্মশালা শুরু করেন। মিলে যায় প্রচুর ছাত্রছাত্রী। তাঁদেরই একজোট করে ভবানন্দবাবু কলাক্ষেত্রে অনুষ্ঠিত তিন দিন ব্যাপী ‘দ্বিতীয় শ্রীমন্ত শঙ্করদেব আন্তর্জাতিক উৎসব’-এ নৃত্যনাট্য পরিচালনা করলেন। নাটকে দুই মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন তাঁর দুই ফরাসী ছাত্র। সূত্রধরের ভূমিকায় অভিনয় করেন ফ্রান্সের ম্যাটি দঁতো। প্রথম শঙ্করদেব আন্তর্জাতিক উৎসবে উপস্থাপিত হয়েছিল ফরাসি ভাষার অঙ্কীয় নাটক ‘পারিজাত হরণ’।