পি প্রভাকর। ছবি: সংগৃহীত।
দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর স্ত্রী। তাতে সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনা করতে পিছপা হন না পি প্রভাকর। এ বার তিনি কলম ধরলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এ ছাত্র আন্দোলন দমনে সরকারি ভূমিকার বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়টির এই প্রাক্তনীর বক্তব্য, বিক্ষোভ-আন্দোলন নতুন কিছু নয় ওখানে। জেএএনইউ বরাবরই আলাদা। কিন্তু শাসক শিবির যে ভাবে সেখানকার আন্দোলনকে তুচ্ছ করে দেখাতে চাইছে, তাতে আখেরে দেশের ক্ষতিই হবে বলে সতর্ক করেছেন প্রভাকর।
জেএনইউয়ে ১৯৮৩-র দিনগুলির কথা মনে করে প্রভাকর লিখছেন, শ্রীলঙ্কায় তামিলদের গণহত্যা, কাম্পুচিয়ায় অত্যাচার, আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন নিয়ে কথায় কথায় প্রতিবাদ হত তখন। নিজেদের হস্টেলে যখন জলের সঙ্কট তীব্র, তখনও ছাত্রনেতারা হুঙ্কার দিতেন, ‘‘যত দিন না দেশের প্রতিটি গ্রামে পানীয় জল পৌঁছচ্ছে, তত দিন আমরা জলের দাবি তুলব না।’’ তুমুল হাততালিতে ফেটে পড়ত সভা।
হালে মাসখানেকের বেশি দিন ধরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদে অশান্ত হয়ে আছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। সঙ্ঘপন্থী কিছু ওয়েবসাইটে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, নয়া হস্টেল নীতি বা ফি বাড়ানোর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই এর। বিপ্লবের আঁচ জিইয়ে রাখতে রাখতে কট্টর কমিউনিস্টরা রীতিমতো ছক কষে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এবং তা জিইয়ে রাখছে।
আরও পড়ুন: জেল ভাঙেন ২৫০ ছাত্রছাত্রী, ছিলেন ধর্মেন্দ্র-হেমা-মালাও!
প্রভাকর মনে করেন, জেএনইউ আলাদা ছিল। আছে এবং থাকবে। সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের সামনে এখন দু’টো রাস্তা খোলা। এক, পড়ুয়াদের আন্দোলনকে ছেঁদো প্রতিপন্ন করা। এই বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যে, এই আন্দোলন নিছকই সস্তায় হস্টেল ও ভর্তুকিতে খাবার পাওয়ার জন্য। বর্তমান শাসক শিবির সেই পথই নিচ্ছে বলে মনে করেন প্রভাকর। অর্থমন্ত্রীর স্বামীর কলমে এমন সমালোচনা কিছুটা হলেও অস্বস্তি বাড়িয়েছে শাসক শিবিরের।
প্রভাকরের মতে দ্বিতীয় পথটি হল, দেশে উচ্চ শিক্ষার স্থান, আরও নির্দিষ্ট করে বললে, সমাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ঠিক কী, আন্তরিক ভাবে সেই জটিল প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এমন নয়া প্রজন্ম তৈরি করা, নাকি আরও বেশি টাকা কামানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া—শিক্ষার মূল লক্ষ্য কী, সেটা বোঝা।
জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের অভিযোগ, সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে রণক্ষেত্রে পরিণত করতে চাইছে। প্রশাসনিক ভবনে শান্তিপূর্ণ ভাবে ধর্নারত পড়ুয়াদের নিরাপত্তা রক্ষীরা টেনে-হিঁচড়ে বার করেছে। ছুড়ে ফেলেছে তাঁদের জিনিসপত্র। ছাত্রীদের উপরে শারীরিক নিগ্রহের ঘটনাও ঘটেছে। অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের এক জন, প্রথম বর্ষের ছাত্রী আরশিকে হাসপাতালেও নিয়ে যেতে হয়। ছাত্র সংসদের মতে, ‘‘কাপুরুষের মতো বিরোধী কণ্ঠ রুদ্ধ করতে চাইছে শাসকেরা।’’ এক বিবৃচিতে তারা বলেছে, প্রশাসনিক ভবন থেকে আন্দোলনকারীদের সরাতে গত শুক্রবার থেকেই দফায় দফায় রক্ষীদের পাঠানো হচ্ছিল। গত সপ্তাহে ভিসি এবং রেজিস্ট্রারও একই কৌশল নিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক বিরোধিতার স্বর দাবিয়ে দিতে, ক্যাম্পাসে পুলিশি অভিযানের পক্ষে সওয়াল করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। যদিও ছাত্ররা এক্যবদ্ধ থাকায় সেই আবেদন প্রত্যাহার করতে হয়েছে। ফি বৃদ্ধি ও হস্টেল সংক্রান্ত নয়া দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনকে আরও জোরদার করার ডাক দিয়েছে জেএনইউয়ের ছাত্র সংগঠন।