ছবি: পিটিআই।
চলতি বছরের শেষেই দেশের অর্থনীতি প্রাক্-কোভিড পরিস্থিতিতে পৌঁছে যাবে বলে নরেন্দ্র মোদী সরকার আশা করছে। তবে ফাঁড়া একটাই। যদি না কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ ফের ধাক্কা দেয়। কোভিডের সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধিও চিন্তায় রাখছে মোদী সরকারকে।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আর্থিক বিষয়ক কমিটিতে অর্থনীতির হাল হকিকত নিয়ে আলোচনা হয়। গত কয়েক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা দাবি করছিলেন, অক্টোবর মাসের বিভিন্ন সূচক বলছে, অর্থনীতির হাল দ্রুত শোধরাচ্ছে। আজ তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরে মোদী সরকারের দাবি, প্রত্যাশার অনেক আগেই লাইনচ্যুত অর্থনীতির রেলগাড়ি আবার নিজের জায়গায় ফিরছে। অক্টোবর মাসে বিদ্যুতের চাহিদা, রেলের পণ্য পরিবহণ, গাড়ির বিক্রি, হাইওয়ের টোল আদায়, জিএসটি থেকে আয় এবং ডিজিটাল লেনদেনের মতো সূচক অন্তত সে কথাই বলছে। সাত মাস ধরে পরিষেবা ক্ষেত্রের সঙ্কোচনের পরে অক্টোবরে বৃদ্ধি বাজারের উন্নতি ইঙ্গিত করছে।
সরকারি সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার আর্থিক বিষয়ক কমিটির ওই বৈঠকে আলু-পেঁয়াজ থেকে ভোজ্য তেলের মতো খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গও ওঠে। বিহারের ভোটের মধ্যেই পেঁয়াজের দামে অস্বাভাবিক
বৃদ্ধি বিজেপি নেতৃত্বকে চিন্তায় ফেলেছে। বুধবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মোদী সরকারকেই দায়ী করেছেন।
আজ অর্থ মন্ত্রকও মেনে নিয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছে। তবে খরিফ ফসল ভাল হওয়ায় বাজারদর ক্রমশ কমে আসবে বলে অর্থ মন্ত্রকের আশা। অর্থ মন্ত্রকের অক্টোবর মাসের মাসিক আর্থিক পর্যালোচনা অনুযায়ী, ‘ভাল খরিফ চাষ ও এক রাজ্য থেকে আর এক রাজ্যে খাদ্যপণ্য পরিবহণের বাধা কেটে যাওয়ায় খাদ্য পণ্যের দাম কমে আসতে পারে।’ শুধু খুচরো বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম নয়। পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হারও চিন্তার কারণ। অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, এ’টি বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিরও প্রতিফলন। অতিমারির ধাক্কায় অনেকেই সাবধানী হয়ে গিয়ে খরচ কমিয়ে সঞ্চয় করছিলেন। সেই ঝোঁকও কমেছে। উৎসবের মরশুমে আগামী কয়েক মাসে বাজারে কেনাকাটাও বাড়বে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, ‘‘ভাল বৃষ্টির ফলে চাষের সেচে বিদ্যুৎ কম প্রয়োজন পড়েছে। রেলের পরিষেবাও পুরোপুরি চালু হয়নি। তা সত্বেও বিদ্যুতের চাহিদা ১২ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ কারখানায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসছে। প্রত্যাশার তুলনায় অনেক আগেই অর্থনীতির হাল শোধরাচ্ছে।’’
সরকারের আশঙ্কা হল, কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় জোয়ার। সরকারও মানছে, কারণ শারীরিক দূরত্ব মানতে মানতে মানুষের মধ্যে ক্লান্তি ও শিথিলতা এসেছে। আজ অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্টেও বলা হয়েছে, ‘‘ভারতের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং এ বছরের শেষেই প্রাক্-কোভিড অবস্থায় পৌঁছে যাবে, যদি না শারীরিক দূরত্বে ক্লান্তির ফলে কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসে।’’
অর্থনীতিবিদরা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অর্থনীতির হাল প্রাক্-কোভিড স্তরে পৌঁছে যাওয়া মানে ৮ শতাংশ হারে আর্থিক বৃদ্ধি নয়। কারণ, কোভিডের আগে জানুয়ারি-মার্চে বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩.১ শতাংশ। লকডাউনের জেরে এপ্রিল-জুনে প্রায় ২৪ শতাংশ আর্থিক সঙ্কোচন হয়। লকডাউন শিথিল হওয়ায় জুলাই-সেপ্টেম্বর, অক্টোবর-ডিসেম্বরের হাল তার থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই ভাল হবে। তা ছাড়া অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আরও এক দফা দাওয়াইয়ের কথাও বলেছেন।
অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্ট অবশ্য বলছে, রাজকোষের হাল কেন্দ্রকে চিন্তায় রেখেছে। কোভিড অতিমারি ও লকডাউনের ধাক্কা সামলাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। আবার লকডাউনের ধাক্কায় রাজস্ব আয়ও কমেছে। তবে রাজকোষের এই অবস্থা অপ্রত্যাশিত বলেই কেন্দ্রের দাবি। কিন্তু সরকারি সূত্রের খবর, এপ্রিল থেকে অক্টোবর, অর্থ বছরের সাত মাসে আয়কর ও কর্পোরেট কর থেকে মাত্র ৩.৮২ লক্ষ কোটি টাকা আয় হয়েছে। যা গোটা বছরের লক্ষ্য ১৩.২ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের মাত্র ২৯ শতাংশ। আয় কম হওয়ায় সরকারকে খরচেও বড় রকম কাটছাঁট করতে হবে।
অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, এক দিকে অর্থমন্ত্রী অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দাওয়াই দেবেন। আর এক দিকে সরকারি খরচ ছাঁটতে হবে। আখেরে কি লাভ হবে তাতে!