সাফল্য মোদীর, ব্যর্থতা মানুষের? প্রশ্ন বিরোধীদের

প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, আর্থিক স্বাবলম্বনের লক্ষ্যে এবং রফতানি হাব হয়ে ওঠার জন্য ভারত আত্মনির্ভর হতে চাইছে ঠিকই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ০৪:১১
Share:

ফাইল চিত্র।

সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মাটিতে চিনা সেনার গেড়ে বসার অভিযোগ তোলায় বিরোধীদের ‘দেশপ্রেম’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মোদী সরকার। এ বার কোভিড মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা ঘিরে তোলা প্রশ্নকেও আমজনতার লড়াইয়ের কৃতিত্ব খাটো করার চেষ্টা বলে দাগিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!

Advertisement

বিরোধীদের অভিযোগ, সংক্রমিতের সংখ্যা আর জিডিপির সঙ্কোচন— দুই নিরিখেই ভারত বিশ্বে প্রথম সারিতে। অর্থাৎ, দীর্ঘ লকডাউনে করোনার প্রকোপে বাঁধ দেওয়া যায়নি। উল্টে আইসিইউয়ে ঢুকে পড়েছে অর্থনীতি। সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে প্রধানমন্ত্রীর জবাব, “করোনার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করেছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাতে গিয়ে তাঁদের সেই কৃতিত্ব খাটো করেন সমালোচকেরা।” তাঁর মতে, সরকারকে সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে দেখার এই প্রবণতা আসলে এখনও কিছু জনের মধ্যে ব্রিটিশ-রাজের সময়ের মানসিকতা থেকে যাওয়ার ফসল। তাঁরা ভুলে যান যে, অতিমারির মোকাবিলায় সরকারের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন ১৩০ কোটি ভারতীয়।

জনতা কার্ফু ঘোষণা থেকে শুরু করে করোনা মোকাবিলায় প্রতি পদে তাঁর সরকার যে জন-সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছে, তা মনে করিয়েছেন মোদী। বলেছেন, মাস্ক পরা থেকে শুরু করে দূরত্ব বিধি বজায় রাখা— মানুষের সহায়তা না-পেলে করোনার থাবা আরও ভয়াল হতো ভারতের মতো বিশাল ও বিপুল জনঘনত্বের দেশে। কিন্তু তা বলে কোভিড মোকাবিলায় সরকারি ব্যর্থতার অভিযোগ তোলা কী ভাবে আমজনতার কৃতিত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হতে পারে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। অভিযোগ, করোনা রুখতে এবং অর্থনীতিকে ফের চাঙ্গা করতে ঘোষিত যাবতীয় পদক্ষেপকে নিজেদের সাফল্য হিসেবে ফলাও করে প্রচার করে কেন্দ্র।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান মায়ার

মোদী তার খতিয়ান তুলে ধরছেন বিহারের ভোট-প্রচারে। অথচ ব্যর্থতার কথা উঠলেই, তুলছেন জন-অংশীদারির কথা! এ আসলে বিরোধীদের সমালোচনা বন্ধের কৌশল। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, শুরুতেই লকডাউনের পথে না-হাঁটলে যে ভারতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি হত, তার প্রমাণ আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান। তাঁর কটাক্ষ, সমালোচকেরা সংক্রমণের মোট সংখ্যায় এমন সমস্ত দেশের সঙ্গে তুলনা টানেন, যাদের জনসংখ্যা ভারতের অনেক রাজ্যের থেকে কম। যদিও অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু দেখিয়েছেন, কোভিডে মৃত্যুর হার কম রাখার ক্ষেত্রে ভারতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে অধিকাংশ প্রতিবেশী দেশই।

আরও পড়ুন: নীতীশের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তেজস্বী, তবে খেলা জমিয়েছেন চিরাগই​

করোনা মোকাবিলায় যে ভাবে প্রতি পদে তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মতামত নিয়েছেন, মোদীর মতে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা অভূতপূর্ব। বিরোধীদের কটাক্ষ, সত্যিই তা-ই হয়ে থাকলে, তার পরে রাজ্যগুলির পাওনা জিএসটি-র ক্ষতিপূরণে বঞ্চনা আর দড়ি টানাটানি কেন!

মোদীর কথায়, করোনা-কালেও যাতে কেউ অভুক্ত না-থাকেন, তার জন্য ৮০ কোটি মানুষকে নিখরচায় রেশন দিচ্ছে সরকার। ২০ লক্ষ কোটি টাকার আত্মনির্ভর প্যাকেজে ভর করে কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে অর্থনীতি। সরে আসার প্রশ্ন নেই ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠার নিশানা থেকেও। বিরোধীদের কটাক্ষ, জিডিপির পরিসংখ্যান কী করে ভুলে গেলেন মোদী? প্রথম ত্রৈমাসিকে তা সরাসরি কমেছে ২৩.৯%। মাথাপিছু জিডিপির হিসেবে ভারতকে ছুঁয়ে ফেলার উপক্রম করেছে বাংলাদেশ! চলতি আর্থিক বছরে ভারতীয় অর্থনীতি প্রায় ১০% সঙ্কুচিত হওয়ার পূর্বাভাস মিলেছে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষায়।

প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন, আর্থিক স্বাবলম্বনের লক্ষ্যে এবং রফতানি হাব হয়ে ওঠার জন্য ভারত আত্মনির্ভর হতে চাইছে ঠিকই। কিন্তু তার অটুট আস্থা বাজার অর্থনীতিতে। পাখির চোখ, বিদেশি বিনিয়োগের পছন্দের গন্তব্য হয়ে ওঠা। কৃষি, শ্রম-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সাহসী সংস্কার প্রমাণ। বিরোধীদের বক্তব্য, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ মুখ থুবড়ে পড়ার পরে তাকেই এখন নতুন মোড়কে আত্মনির্ভর ভারতের নাম দিয়েছেন মোদী। বরং ছাঁটাইয়ের রাস্তা মসৃণ করা নতুন শ্রমবিধিকে মোদী কোন যুক্তিতে শ্রমিকবান্ধব বলছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে তারা। মান্ডির শিকল চাষিদের পা থেকে খুলে দেওয়ার পরেও প্রতিবাদে এত কৃষক রাস্তায় কেন, জিজ্ঞাসা তা ঘিরেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement