গণতন্ত্র বাঁচাও: সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা বয়কট করে বিরোধী দলগুলির যৌথ ধর্নায় সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। মঙ্গলবার। ছবি: প্রেম সিংহ
লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর বিজয় রথের ধাক্কায় ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল বিরোধী শিবির। সংসদীয় ঐক্যও ছিল না ভোট পরবর্তী বাজেট অধিবেশনে। আজ মহারাষ্ট্র পরিস্থিতির জেরে সেই থমকে যাওয়া বিরোধী ঐক্যের ছবি ফের দেখা গেল সংসদ চত্বরে। সংবিধান গ্রহণের ৭০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শাসক দল যখন আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতিকে নিয়ে সংসদের সেন্ট্রাল হলে অনুষ্ঠান করছে, তখন সংসদের বাইরে বি আর অম্বেডকরের মূর্তির নিচে জমায়েত হলেন কংগ্রেস, তৃণমূল, এসপি, ডিএমকে,
আরজেডি, বাম, এনসিপি-সহ ১৮টি বিরোধী দলের নেতা-সাংসদেরা। ছিলেন বিরোধীদের নতুন অতিথি, শিবসেনার সাংসদও। পরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী টুইট করে জানান, ‘‘গোটা দেশ যখন সংবিধান নিয়ে উৎসব করছে, তখন বিজেপি সরকার তাকে ধ্বংস করার জন্য ব্যস্ত। সংবিধান প্রত্যেকটি মানুষের জন্য। তাকে বাঁচানোর জন্য সব রকম ভাবে চেষ্টা করতে হবে।’’ গতকালই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে আলোচনা হয় মহারাষ্ট্র পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবারের ধর্না কর্মসূচি নিয়ে। সুদীপকে গতকাল বিকেলে ফোন করে সনিয়া জানান, ডিএমকে নেতা টি আর বালু এবং এসপি নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তৃণমূলকেও তাঁরা পাশে চান। সুদীপ পাল্টা জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা থেকে ইতিমধ্যেই তাঁকে ধর্নায় বসার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে কংগ্রেসও যদি একই পরিকল্পনা করে, তা হলে একসঙ্গে বিষয়টি করাই যায়। এর পর অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারাও পরস্পরের মধ্যে কথা বলেন। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, বিএসপি এবং আপ এই ধর্নায় যোগ দেবে না।
ধর্নার বিষয়ে ঐকমত্য হলেও আজ সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠান বয়কট করার প্রশ্নে কিছুটা দ্বিধা ছিল কংগ্রেস এবং এনসিপি-র মধ্যে। তবে আজ সকালে নিজেদের মধ্যে একদফা কথা বলার পরে বয়কটের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন নেতারা। আপ-এর পক্ষ থেকে তৃণমূলকে জানানো হয়, সামনেই দিল্লি নির্বাচন। তাই তাঁরা বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয়ের থেকেই সমদূরত্বে থাকতে চাইছেন। আজ সংসদের অনুষ্ঠান বয়কট করলেও ধর্নায় যোগদানের ক্ষেত্রে তাঁদের অপারগতার কথা তৃণমূল নেতৃত্বকে জানিয়ে দেয় অরবিন্দ কেজরীবালের দল।
ধর্নামঞ্চে দেখা যায়নি টিডিপি এবং বিজেডি-কেও।
বিজেপি আমলে সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে— এই প্রতীকি ছবিকে ধর্নায় তুলে ধরতে তৃণমূল প্রস্তাব দেয়, বিভিন্ন দলের সাংসদেরা সংবিধান থেকে তাঁদের ইচ্ছামতো অংশ পড়ুন অম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশ। গোটা বিষয়টি পরিচালনা করেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। সনিয়া গাঁধী সংবিধানের প্রস্তাবনাটি পড়ে শুরু করেন। পঞ্চাশেরও বেশি সাংসদ আজ ৯টি ভাষায় পড়েছেন সংবিধানের বিভিন্ন ধারা। বাংলায় পড়েন তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়।