সিবিআই-ইডির চাপ, তাই উধাও সাংসদরা

কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ এবং তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনের অভিযোগ, পরশু অনেক রাতে রাজ্যসভার পূর্বনির্ধারিত সূচি বদলে তিন তালাক বিল আনা হয় এবং গোপনে বিজেপি দলের সবাইকে হুইপ দিয়ে রেখেছিল।

Advertisement

অগ্নি রায় ও দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪৩
Share:

গুলাম নবি আজাদ। সংসদে। ছবি: পিটিআই।

গত শুক্রবার রাজ্যসভায় তথ্যের অধিকার সংশোধনী বিলটি পাশ করার সময়েই বিরোধী ঐক্যের কঙ্কালসার চেহারাটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার চার দিনের মধ্যেই মঙ্গলবার তিন তালাক বিলটি যে ভাবে পাশ করিয়ে নিল মোদী সরকার, তাতে স্পষ্ট যে বিজেপির প্রবল চাপের মুখে ভেঙে পড়ছে বিভিন্ন আঞ্চলিক বিরোধী দলের প্রতিরোধ। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, সিবিআই এবং ইডি-কে ব্যবহার করে বিরোধী দলগুলিকে সমঝোতার রাস্তায় আনতে কার্যত বাধ্য করছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বিলগুলিকে সংসদীয় কমিটিতে না-পাঠিয়ে ঝড়ের বেগে পাশ করানো নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও, নিজেদের মান ও অস্তিত্ব বাঁচাতে বিল পাশের সময় ভোটাভুটিতে অংশ না-নিয়ে, কেন্দ্রীয় সরকারের হাত শক্ত করছে এসপি, বিএসপি, এনসিপি, টিডিপি, টিআরএস-এর মতো দলগুলি।

Advertisement

কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ এবং তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনের অভিযোগ, পরশু অনেক রাতে রাজ্যসভার পূর্বনির্ধারিত সূচি বদলে তিন তালাক বিল আনা হয় এবং গোপনে বিজেপি দলের সবাইকে হুইপ দিয়ে রেখেছিল। কংগ্রেসের বক্তব্য, তারা সেই সুযোগ পায়নি। কিন্তু ঘটনা হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সপ্তাহেই নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাজ্যসভায় দলের সবাই যেন শেষ দিন পর্যন্ত উপস্থিত থাকেন। সবাই ছিলেন এবং দল থেকে বিচ্ছিন্ন সাংসদ কে ডি সিংহ বাদ দিয়ে সবাই ভোটও দিয়েছেন বিলের বিপক্ষে। আর গুলাম নবি আজ অস্বীকার করলেও, পরশুই হুইপ দিয়েছিল কংগ্রেস। তাদের ৪৭ জনের মধ্যে ৪৩ জন উপস্থিত ছিলেন। বাকিদের অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে যোগাযোগহীনতাকে দায়ী করা হচ্ছে।

তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি-বিরোধী অন্য আঞ্চলিক দলগুলির সাংসদদের বড় অংশের অনুপস্থিতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, সিবিআই এবং ইডির জোড়া চাপ কী ভাবে কাঁপিয়ে দিয়েছে তাঁদের। বিএসপির ৪ জনই, এসপির ১২ জনের মধ্যে ৭ জন, এনসিপির ৪ জনের মধ্যে ২ জন অনুপস্থিত ছিলেন। তিন তালাক বিল নিয়ে পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি আবেগঘন বক্তৃতা দেওয়ার পরেও তাঁর দুই রাজ্যসভা সাংসদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। গত কাল মেহবুবা গুরুত্ব না-দিলেও আজ জানিয়েছেন, অনুপস্থিত সাংসদদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। জানা গিয়েছে, টিডিপির চার রাজ্যসভার সাংসদ বিজেপি-তে চলে যাওয়ার পরে বাকি দু’জনও তলে তলে বিজেপির হয়েই কাজ করছেন। গত কাল ভোটাভুটির সময়ে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়নি!

Advertisement

নিশানায়

অখিলেশ যাদব
ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডি তদন্ত, নজরে অখিলেশও
মায়াবতী
ভাই আনন্দ কুমারের বিরুদ্ধে বেনামি সম্পত্তির তদন্ত আয়কর দফতরের
শরদ পওয়ার
বিমান কেলেঙ্কারিতে ইডির জিজ্ঞাসাবাদ প্রফুল্ল পটেলকে। ইডি-সিবিআই দল ভাঙছে, অভিযোগ পওয়ারের।
তেজস্বী যাদব
আইআরসিটিসি দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ ইডি-সিবিআই-এর
চন্দ্রবাবু নায়ডু
দুর্নীতির অভিযোগ ইডি, সিবিআই-কে পাঠাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন
জগন্মোহন রেড্ডি
দলই বলছে, জগনের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা
ফারুক আবদুল্লা
ক্রিকেট সংস্থা দুর্নীতিতে ইডির জিজ্ঞাসাবাদ
মেহবুবা মুফতি
আর্থিক নয়ছয় মামলায় ধরপাকড়ে অস্বস্তিতে

তিন তালাক নিয়ে ভোটের আগে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেছিলেন, ‘‘সরকারের পক্ষে থাকবেন ১০০ জন। বিপক্ষ পাবে ৮৪।’’ এই সংখ্যা তিনি প্রায় কাঁটায় কাঁটায় মিলিয়ে দিয়েছেন! রাজনৈতিক সূত্রের মতে, সরকারের এই গা-জোয়ারি মনোভাব সফল হওয়ার পিছনে রয়েছে বিরোধীদের গা-বাঁচানোর তাগিদ। এনসিপির শরদ পওয়ার এবং প্রফুল পটেলের মতো দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ঘটনাচক্রে বিমান-দুর্নীতিতে ইডি জেরা করছে প্রফুল পটেলকে। এসপি এবং বিএসপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও ইডি এবং সিবিআইয়ের তদন্তের সাঁড়াশি ক্রমশ আঁট হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement