ছবি: সংগৃহীত।
বাজেটেই ঘোষণা হয়েছিল, এলআইসি-র মালিকানার একাংশ নরেন্দ্র মোদী সরকার বেচে দেবে। এ বার তার প্রস্তুতি শুরু হতে বিরোধিতাও শুরু হয়ে গেল।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আজ মোদী সরকারকে নিশানা করে বলেছেন, ‘‘আমজনতার ভবিষ্যৎ ও ভরসা শিকেয় তুলে রেখে এলআইসি বেচা মোদী সরকারের আরেকটি নির্লজ্জ প্রয়াস।’’
এখন এলআইসি-র ১০০ শতাংশ মালিকানাই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। সরকারি সূত্রের খবর, ধাপে ধাপে ২৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে। এলআইসি-র শেয়ার প্রথম বার বাজারে ছাড়ার আগে এলআইসি আইনে সংশোধন করতে হবে। সরকারি সিলমোহর বসাতে মন্ত্রিসভার খসড়া নোট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে। খুচরো লগ্নিকারীদের উৎসাহ দিতে তাঁদের জন্য শেয়ারের দামে ১০ শতাংশ ছাড়ের সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। এলআইসি-র কর্মী সংগঠনগুলি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা শুরু করেছে। তাঁদেরও সংস্থার শেয়ার কেনায় উৎসাহ দিতে একই রকম ছাড় দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড টুরিজম কর্পোরেশনের (আইআরসিটিসি) ১৫-২০ শতাংশ শেয়ার বেচার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। বিক্রি করা হবে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের অধীনস্থ সংস্থার সম্পত্তিও।
লকডাউন ও তার আগে থেকেই অর্থনীতির ঝিমুনির ফলে অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্য দিকে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ায় সরকারের কোষাগারে টান পড়েছে। অর্থ মন্ত্রক আশা করছে, এলআইসি-র শেয়ার বেচে বিলগ্নিকরণ থেকে ২.১০ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যের অনেকটাই পূরণ করা যাবে।
সরকারের অনুমান, বাজারে এলআইসি-র মূল্য অন্তত ১৩ থেকে ১৫ লক্ষ কোটি টাকা। যার অর্থ, প্রথম দফায় এলআইসি-র ১০ শেয়ার বাজারে ছাড়া হলেও প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তোলা সম্ভব। এখানেই রাহুল প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘নিজের তৈরি আর্থিক দুরবস্থা সামাল দিতে দেশের সম্পত্তি একটু একটু করে বেচে দেওয়া হচ্ছে। মোদীজি সরকারি কোম্পানি বেচার অভিযান শুরু করেছেন।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, ‘‘মানুষ সারা জীবনের সঞ্চয়ের টাকা এলআইসি-তে রাখাই সবচেয়ে নিরাপদ বলে মনে করেন। তার বেসরকারিকরণের অর্থ দিনের আলোয় জাতীয় লুট।’’ বাজেটের ঘোষণার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, এলআইসি-তে টাকা রেখে মানুষ নিরাপদ বোধ করতেন। সেই নিরাপত্তার বোধ আর থাকবে না।
অর্থ মন্ত্রকের অবশ্য যুক্তি, একে এলআইসি-র বেসরকারিকরণ বলা ঠিক নয়। কারণ এলআইসি বেচে দেওয়া হচ্ছে না। বাজেটের ঘোষণার পরেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন, এলআইসি-র মালিকানা সরকারি হাতেই থাকবে। এলআইসি-র বিমায় সরকারি গ্যারান্টিও বহাল থাকবে। এলআইসি-র চেয়ারম্যান এম আর কুমারও বলেছিলেন, সঞ্চয়কারী ও কর্মীদের উপরে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। ২৯ কোটি গ্রাহক, ১২ লক্ষ এজেন্ট নিয়ে এলআইসি সম্পর্কে মানুষের ধারণা ইতিবাচক রাখার সব চেষ্টা হবে। সরকারি সূত্রের খবর, বাজারে ছাড়া শেয়ারের মধ্যে ৫ শতাংশ এলআইসি কর্মী ও খুচরো লগ্নিকারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা যেতে পারে। মন্ত্রিসভার সিলমোহরের পরে খুঁটিনাটি বিষয় ঠিক করতে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি হবে।