প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
আদানি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখ না খোলায় বিরোধীদের অভিযোগ ছিলই। তার সঙ্গে এ বার রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীর ‘আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা’ নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুললেন। কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় তাঁর অহঙ্কার ফুটে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সময় বিরোধীরা টানা ‘মোদী-আদানি সম্পর্ক’ নিয়ে স্লোগান দিয়েছিলেন। বক্তৃতার শেষ পর্বে মোদী বাঁ হাতে নিজের ছাতি চাপড়াতে চাপড়াতে বলেন, তিনি একাই সকলকে টেক্কা দিচ্ছেন। বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলে বলেন, বিরোধীরা একজোট হয়েও তাঁর সঙ্গে টেক্কা দিতে পারছেন না।
রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিজের প্রশংসা করেছেন। বিরোধীদের কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি। আদানি, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মুখ খোলেননি। উনি দাবি করেছেন, একমাত্র উনিই দেশকে বাঁচাতে পারেন। এটাই ওঁর অহঙ্কার।’’ প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে সংসদে দাঁড়িয়ে ছাতি ঠুকছেন, তা প্রধানমন্ত্রীর পদোচিত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার বলেন, ‘‘ভারতের সবথেকে আক্রমণাত্মক ও হুমকি দেওয়া প্রধানমন্ত্রী। তাঁর শরীরের ভাষা ও মিথ্যে দেখতে হয়।’’
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার প্রশ্ন তুলেছিলেন, গান্ধী পরিবারের সদস্যেরা কেন নেহরু পদবি ব্যবহার করেন না? এই ‘ব্যক্তিগত কটাক্ষ’ নিয়েও বিরোধীরা মোদীর নিন্দা করেছেন। কংগ্রেস সাংসদ রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অপরিচিত ব্যক্তিই দায়িত্বপূর্ণ পদে বসে এ কথা বলতে পারেন। এ দেশে কেউ নিজের ঠাকুমার বাবার পদবি ব্যবহার করেন? প্রধানমন্ত্রীর যদি এটাও জানা না থাকে, তা এ দেশকে ভগবানই বাঁচাতে পারে।’’
প্রধানমন্ত্রী লোকসভা, রাজ্যসভায় আদানি নিয়ে রাহুল গান্ধী বা মল্লিকার্জুন খড়্গের প্রশ্নের জবাব না দিলেও আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আদানি গোষ্ঠী নিয়ে রাহুল গান্ধীর অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। রাহুল লোকসভায় বলেছিলেন, ‘‘আদানি গোষ্ঠী গত বছরই পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন তৈরির জন্য পাঁচ হাজার কোটি ডলার লগ্নির কথা বলেছিলেন। তার পরেই বাজেটে নির্মলা সীতারামন পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেনে উৎসাহ দিতে১৯,৭০০ কোটি টাকা উৎসাহভাতা ঘোষণা করেছে। যার অর্থ হল, এটা আদানির কাছে যাবে।’’ শুক্রবার সীতারামন তার জবাবে বলেন, ‘‘আমার নাম করে আক্রমণ করা হয়েছে। বারবার আমাকে নিশানা করা হচ্ছে। বিশেষ কাউকে মনে রেখে ওই ঘোষণা হয়নি। মোদী জমানায় জামাইবাবু-ভাইপোদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয় না।’’
কংগ্রেস আজ ফের প্রশ্ন তুলেছে, মোদীর সঙ্গে আদানির কোনও আঁতাঁত না থাকলে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে না কেন? কংগ্রেস সভাপতি খড়্গের প্রশ্ন, কেন মোদী সরকার সংসদে আদানি শব্দটাই বলতে দিচ্ছে না? আদানির শেয়ারে এলআইসি-র লগ্নির মূল্য কমলেও তা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না? আদানিকে দেওয়া স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ সরকারি ব্যাঙ্কের ৮২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না? আদানির প্রতারণা, শেয়ার দরে কারচুপি সত্ত্বেও সিবিআই, ইডি, এসএফআইও, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি, আয়কর দফতর চোখ বুজে থাকলেও তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না?