Opposition Party Meet

তাস লুকিয়ে কৌশলী মমতা, অধ্যাদেশ প্রশ্নে সকলে পাশে না দাঁড়ালে বৈঠক ছাড়তে পারে আপ

পটনা সার্কিট হাউসে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেছেন নীতীশ। মমতা বলেছেন, দেশ ও নিজেদের রাজ্য সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। নীতীশের গঠনমূলক আলোচনার মনোভাবকে স্বাগতও জানিয়েছেন মমতা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

পটনা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৩ ০৭:১৩
Share:

নীতীশ কুমারের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার পটনায়। ছবি: পিটিআই।

আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগেই ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি-বিরোধী রণনীতি গড়ে তোলার কাজে নেমে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিকে রুখতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থীর সূত্র পছন্দের হলেও বৈঠকের আগে সেই প্রসঙ্গে মন্তব্য থেকে বিরত থাকলেন। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের অধ্যাদেশের প্রশ্নে কংগ্রেস-সহ বাকিরা তাদের পাশে না দাঁড়ালে বিরোধী বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার হুঁশিয়ারি শুনিয়ে রাখল অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আম আদমি পার্টি।

Advertisement

পটনায় অ-বিজেপি দলগুলির মহা-বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে বজায় থাকল বিরোধী শিবিরের টানাপড়েন। আপের হুঁশিয়ারির জবাবে মুখ খুলতে হল কংগ্রেসকেও। তারই পাশাপাশি পটনায় পৌঁছে আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদব এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারের সঙ্গে আলাদা করে বসে প্রাথমিক আলোচনা সেরে রাখলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। প্রসঙ্গত, অ-বিজেপি শিবিরের বৈঠক যাতে পটনায় হয়, সেই প্রস্তাব মমতাই দিয়েছিলেন কলকাতায় নীতীশের সঙ্গে আলোচনায়।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঠিক হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের সরকারি বাসভবনেই শুক্রবার অ-বিজেপি দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠক বসবে। পটনার জ্ঞান ভবনে নয়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে পটনায় পৌঁছেই মমতা গিয়েছিলেন সার্কুলার রোডে বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের বাংলোয়। মমতার সঙ্গে দেখা করার জন্য লালু ও রাবড়ী দেবী চলে এসেছিলেন ছেলের বাড়িতে। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনও পটনায় এসেছেন। তবে লালুর বাড়িতে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলে তিনি ছিলেন না। লালুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন মমতা, সঙ্গে অভিষেকও। সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘‘লালুজি বর্ষীয়ান নেতা। অনেক দিন জেলে ছিলেন, হাসপাতালেও ছিলেন। দেখা হয়ে খুব ভাল লাগল। বিজেপির সঙ্গে লড়াই করার জন্য লালুজি এখনও যথেষ্ট সুস্থ আছেন।’’

Advertisement

সন্ধ্যায় পটনা সার্কিট হাউসে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেছেন নীতীশ। মমতা বলেছেন, দেশ ও নিজেদের রাজ্য সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। নীতীশের গঠনমূলক আলোচনার মনোভাবকে স্বাগতও জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। রাতে তাঁর সঙ্গে সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজাও দেখা করেছেন বলে সূত্রের খবর।

স্বভাবতই বিরোধী ঐক্যের প্রসঙ্গে প্রশ্ন এসেছিল তৃণমূল নেত্রীর সামনে। মমতা বলেছেন, ‘‘একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের কথা আমরা বলেছিলাম। তবে বৈঠক হওয়ার আগে এই নিয়ে কিছু বলতে চাই না। সবাই কী মত দেয়, দেখা যাক।’’ বাংলায় সিপিএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই চলছে, আবার জাতীয় স্তরে তিন দল এক জায়গায় বসছে। এর মধ্যে স্ব-বিরোধ নেই? এই প্রশ্নেও মমতার জবাব, ‘‘একটা সূত্র ঠিক হলে সেটা সকলের জন্যই প্রযোজ্য হবে। এখনই এই নিয়ে মন্তব্য করব না।’’

তৃণমূল নেত্রী যখন বৈঠকের আগে তাস গোপন রেখে কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন, আপ তখন খোলাখুলিই দাবি করেছে, কেন্দ্রের অধ্যাদেশই পটনায় মুখ্য আলোচ্য হওয়া উচিত। কংগ্রেস এবং বাকিরা সমর্থন না করলে তারা বৈঠকে থাকবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে আপ সূত্রে। এই বক্তব্যের পরে জল্পনা ছড়িয়েছিল, তা হলে কি কেজরীওয়াল পটনার বৈঠকে আদৌ আসবেন না? কিন্তু বিকেলের দিকে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান ও দলের অন্য নেতাদের নিয়ে শহরে পৌঁছেছেন তিনি। নতুন করে তাঁরা আর মুখ খোলেননি। তবে কংগ্রেসের তরফে সন্দীপ দীক্ষিত বলে রেখেছেন, ‘‘বিজেপি-বিরোধী ঐক্যে না থাকার বাহানা খুঁজছে আপ! ওরা না থাকলে কিছুই যায় আসে না। আর এই বিরোধী বৈঠক দরাদরি করার জন্য নয়!’’

কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে বিরোধী বৈঠকের আয়োজক জেডিইউ-ও। দলের জাতীয় মুখপাত্র কে সি ত্যাগীর কথায়, ‘‘যে বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক হচ্ছে, তাদের সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫০লোকসভা আসনে প্রভাব আছে। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরের লড়াই সম্ভব নয়, বিরোধী ঐক্যও কার্যকর হয় না। যাদের কংগ্রেসকে নিয়ে প্রবল আপত্তি ছিল, তাদের বুঝিয়ে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার কাজটা করেছেন নীতীশ।’’

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও রাহুল গান্ধীর পটনা আসার কথা শুক্রবার সকালেই। বিহার প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অখিলেশ প্রতাপ সিংহ মনে করাচ্ছেন, ‘‘বিরোধী বৈঠকের পোস্টারে কংগ্রেস কিন্তু সব দলের নেতাদের ছবি দিয়েছে। আপ বা সমাজবাদী পার্টির পোস্টারে রাহুলজি বা অন্য কেউ নেই! এতেই বোঝা যাচ্ছে, কংগ্রেস শুধু বড় দল নয়, তাদের মনও বড়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement