ফাইল চিত্র।
সংসদে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ৬ অগস্ট। ঘটনাচক্রে সে দিন দিল্লিতেই থাকবেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী শিবির আশা করছে, সে দিন উপরাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে সমর্থন করতে দেখা যেতে পারে মমতার দলকে। তাঁদের মতে, আর দু’তিন দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্গারেট আলভা নিজে একাধিক বার কথা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অন্য বিরোধী দলের নেতারাও কথা বলছেন।
উপরাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী প্রার্থীর প্রচার নিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে সমন্বয় করার দায়িত্বে ছিলেন যাঁরা, তাঁদেরই এক নেতার দাবি— মমতা ভোট দানে বিরত থাকার অবস্থান বদলে আলভাকে সমর্থন জানাতে চলেছেন। বিরোধী প্রার্থীর প্রচার-সমন্বয়ের প্রধান দায়িত্বে রয়েছেন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ার, কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেরা। তৃণমূলের পাশাপাশি তাঁরা কথা বলছেন আপ-এর সঙ্গেও। বিরোধী প্রার্থীকে সমর্থন করার বিষয়টি আপ এখনও ঝুলিয়ে রেখেছে।
বিরোধী শিবিরের এক নেতার বক্তব্য, বিরোধী প্রার্থীকে ভোট না-দেওয়ার পিছনে মমতা যে যুক্তি দিয়েছিলেন তা তাঁরা শুনেছেন। মমতা বলেছেন, তাঁর সঙ্গে ঠিক ভাবে আলোচনা করা হয়নি, নাম ঠিক করে ঘোষণার কিছু আগে তৃণমূলকে তা জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিরোধী শিবিরের ওই নেতার বক্তব্য, আদতে খোদ কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী ফোন করে কথা বলেছিলেন মমতার সঙ্গে। বিরোধী এক নেতার বক্তব্য, “মমতার প্রধান রাজনৈতিক ইউএসপি হল তাঁর বিজেপি-বিরোধিতা। প্রবল পরাক্রান্ত বিজেপিকে তিনি রুখেদিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। কংগ্রেসের প্রতি ‘অ্যালার্জি’ তাঁর যতই থাক না কেন, এমন বার্তা তিনি কখনই দিতে চাইবেন না যে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের গোপন আঁতাত রয়েছে। চব্বিশের লোকসভা ভোটে তার প্রভাব পড়বে।” তাঁর মতে, একুশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা যা বলেছেন, ভোটারদের প্রতি তাঁর সেটাই বার্তা। তা হল, বিজেপিই এই মুহূর্তে তাঁর প্রধান রাজনৈতিক শত্রু। ফলে বিজেপি-বিরোধী প্রার্থীর পাশ থেকে সরে যাওয়ার বার্তা তিনি শেষ পর্যন্ত দিতে চাইবেন না। আলভার সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভাল। মমতা ভোটে নারাজ শুনেও আলভা আশা প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি শেষ পর্যন্ত তৃণমূলকে পাশে পাবেন। এই বিষয়টিকেও বিবেচনার মধ্যে রাখা হচ্ছে।
তৃণমূল নেত্রীর দিল্লি আসার কথা রয়েছে ৪ তারিখ। ৭ তারিখ নীতি আয়োগের বৈঠক পর্যন্ত থাকবেন তিনি। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা হবে তাঁর। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার এবং বিপুল অর্থ উদ্ধার নিয়ে রাজ্য যখন উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে, ঠিক সেই সময়েই তাঁর দিল্লি আগমন। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এমন কোনও বার্তা যাতে না যায় যে তাঁর দল যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে বলেই তাঁর এই দীর্ঘ দিল্লি সফর, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
মমতা বারবারই বলছেন, যা জোট হবে তা লোকসভা ভোটের পরে হবে। যে যেমন সংখ্যা নিয়ে আসবে তার উপর তৈরি হবে বিরোধী জোটের চরিত্র। তিনি বলছেন, চব্বিশে বিজেপির ফেরার সম্ভাবনা নেই। মহারাষ্ট্রেও ইডি-কে ব্যবহার করে বিরোধীদের সরকার ফেলা হয়েছে। ঝাড়খণ্ড বা ছত্তীসগঢ়েও সেই চেষ্টা হচ্ছে। বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, সংসদে ইডি নিয়ে হইচই তৃণমূল না করলেও মমতা তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহারের প্রতিবাদ করছেন।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ তারিখ দিল্লিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন নেত্রী। সে দিনই রাজ্যসভা এবং লোকসভার দলীয় সাংসদদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা। পাঁচ তারিখ তাঁর সংসদে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। ৭ অগস্ট নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে যোগ দেবেন মমতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই বৈঠকটির সভাপতিত্ব করবেন। সেখানে মোদী-মমতা সাক্ষাৎ হবে। আলাদা করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন কি না, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।