গাঁধী জয়ন্তী উপলক্ষে ১ লক্ষেরও বেশি বেলুন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই মূর্তিটি। শনিবার তিরুঅনন্তপুরমে। পিটিআই
গাঁধী জয়ন্তীর সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গাঁধী স্মৃতি, রাজঘাটে মহাত্মা গাঁধীকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। টুইট করেছিলেন, “পূজনীয় বাপুর জীবন ও আদর্শ দেশের সব প্রজন্মকে কর্তব্যের পথে চলতে অনুপ্রাণিত করবে।’’
‘#গাঁধী জয়ন্তী’ নয়। মহাত্মা গাঁধীর জন্মদিবসে ভারতের টুইটারে রাজনৈতিক আলোচনায় সব থেকে চর্চিত বিষয় হয়ে উঠল ‘নাথুরাম গডসে জিন্দাবাদ’। গাঁধীর জন্মদিনে এত বেশি মানুষ তাঁর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের জয়ধ্বনি দিলেন যে টুইটারে ‘#নাথুরাম গডসে জিন্দাবাদ’ ট্রেন্ড করল।
কারা জয়ধ্বনি তুললেন গডসের নামে? দেখা গেল, তাঁদের অনেকেই উত্তরপ্রদেশ-সহ অন্যান্য রাজ্যের বিজেপির আইটি সেলের সদস্য বলে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। কেউ আবার নিজেকে সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র সদস্য বলেও জানিয়েছেন। অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা-র মতো সংগঠনও নাথুরামের জয়ধ্বনি তুলেছে।
নাথুরাম গডসের প্রতি বিজেপি, আরএসএস ও বিভিন্ন কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনের মনোভাব নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছে। ভোপালের বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা নাথুরাম গডসেকে ‘দেশপ্রেমী’-র তকমা দিয়েছিলেন। পরে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে তিনি দুঃখপ্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি সাধ্বীকে কখনও ক্ষমা করতে পারবেন না। কিন্তু সাধ্বীর বিরুদ্ধে বিজেপি কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। কংগ্রেসের অভিযোগ, এ দিনও বিজেপি বা আরএসএস গডসের জয়ধ্বনি দিয়ে নিজেদের বিজেপি, সঙ্ঘ পরিবারের লোক বলে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিদের নিন্দা করেনি।
শীর্ষ নেতারা এ নিয়ে মুখ না খুললেও বিজেপি সাংসদ বরুণ গাঁধী আজ বলেছেন, “যারা গডসে জিন্দাবাদ বলে টুইট করছেন, তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে দেশের মুখ পোড়াচ্ছেন।” তাঁর বক্তব্য, আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের যে সম্মান রয়েছে, তা মহাত্মা গাঁধীর জন্য, তাঁর আদর্শের জন্য। বরুণের দাবি, যারা এই সব টুইট করছেন, সেই সব ‘উন্মাদদের’ কোনও ভাবেই মূল স্রোতে ঢুকতে দেওয়া চলবে না।
সোশ্যাল মিডিয়া, নেট দুনিয়ায় ভুয়ো খবর ছড়ানো আটকাতে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন তথ্যপ্রযুক্তি বিধি এনেছে। বাক-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠলেও মোদী সরকার তাতে অনড়। আজ গুজরাতের কংগ্রেস নেতা হার্দিক পটেল দাবি করেছেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে আর্জি, যারা
গাঁধীজির হত্যাকারীর জয়ধ্বনি দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওা হোক। এ সবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দোষীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হোক।’’
অমিত শাহ নিজেও আজ মহাত্মা গাঁধীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে টুইট করে বলেছিলেন, “উনি গোটা বিশ্বকে শান্তি ও অহিংসার পথে চলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন।” তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বা অন্য কোনও সরকারি সংস্থার তরফে গডসের জয়ধ্বনি করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের নমুনা মেলেনি। যুব কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি শ্রীনিবাস বি ভি বলেন, “ভারতীয় হিসেবে আমি আজ লজ্জিত। গডসেবাদী সরকারের রাজত্বে জাতির জনকের জন্মদিনে শাসক দলের সায়ে ভারতের প্রথম সন্ত্রাসবাদী নাথুরাম গডসের নামে জয়ধ্বনি দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এই দ্বিচারিতা বন্ধ করুন। মুখে গাঁধী, মনে গডসে!’’