Economy

মন্দা আরও গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হবে, মোকাবিলায় তিন দাওয়াই মনমোহনের

তিনি আরও বলেন, ‘‘লকডাউন প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ঘোষণার আকস্মিকতা এবং কঠোরভাবে তা প্রয়োগ করা ছিল বিচারবুদ্ধিহীন ও অমানবিক।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২০ ১৬:০৫
Share:

আর্থিক মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় বললেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। -ফাইল চিত্র

অর্থনীতিতে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী মন্দা অবশ্যম্ভাবী ছিল। কিন্তু তার মোকাবিলায় যে পন্থা নেওয়া উচিত ছিল সরকারের, সরকার সে ভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি। করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের মোকাবিলায় মোদী সরকারের আর্থিক নীতিকে এ ভাবেই সমালোচনা করলেন মনমোহন সিংহ। আচমকা লকডাউন ঘোষণা করে নরেন্দ্র মোদী সরকার জনগণের দুর্দশা বাড়িয়েছিল বলে একটি সাক্ষাৎকারে মত প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তবে একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে তিনটি পন্থাও বাতলে দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহ।

Advertisement

নয়ের দশকের গোড়ায় ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে উদার অর্থনীতির দরজা খুলে দিয়েছিলেন মনমোহন সিংহ। তাঁর সেই দাওয়াইয়ে যে বিপুল কাজ হয়েছিল, তা এখন অর্থনীতিবিদরা একবাক্যে স্বীকার করে নেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং লকডাউনের জেরে ফের তীব্র সঙ্কটের মুখে দেশের অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতিতেই মুখ খুললেন অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহ। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি-কে ই-মেল সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বর্তমানের অর্থনৈতিক মন্দা অনেকটাই ‘মানুষের তৈরি সঙ্কট’। অর্থাৎ মোদী সরকার যে পরিস্থিতি ঠিক ভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি, সেই দিকেই ইঙ্গিত করেছেন ইউপিএ জমানার দু’বারের প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় গত ২২ মার্চ জনতা কার্ফু পালিত হয়েছিল গোটা দেশে। তার পর আচমকাই ২৪ মার্চ দু’সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছিল পরের দিন থেকে। তার পর কয়েক দফায় লকডাউন চলেছে ৩১ মে পর্যন্ত। তার পর থেকে শুরু হয়েছে আনলক। কিন্তু মনমোহন সিংহের মতে, এ ভাবে প্রস্তুতি না নিয়ে হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা করা ঠিক হয়নি সরকারের। যদিও লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেননি তিনি। তাঁর মতে, হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণার জেরে ‘ভয়াবহ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে দেশবাসীকে’। বিবিসি-কে তিনি বলেছেন, ‘‘হয়তো ওই সময়ে লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই ছিল। কিন্তু ঘোষণার আকস্মিকতা এবং কঠোরভাবে তা প্রয়োগ করা ছিল বিচারবুদ্ধিহীন ও অমানবিক।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা পজিটিভ প্রণব মুখোপাধ্যায়, নিজেই জানালেন টুইটে

কিন্তু যা হবার, তা তো হয়ে গিয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়াতে কী করা উচিত, সে বিষয়েও আলোকপাত করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে, তিনটি পন্থা নিয়ে এগোলে এখনও আগামী কয়েক বছরে অর্থনীতি ফের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে। প্রথমত, নগদ অনুদান। মনমোহন সিংহ মনে করেন, প্রথমত, সরকারের উচিত ‘আম জনতার জীবিকা সুরক্ষিত করা এবং তাঁরা যাতে নগদ টাকা খরচ করতে পারেন, সরাসরি নগদ অনুদানের মাধ্যমে তা সুনিশ্চিত করা’। দ্বিতীয়ত, শিল্প ক্ষেত্রে সংস্থাগুলির যাতে পর্যাপ্ত মূলধন থাকে, তার ব্যবস্থা করা। এর জন্য সরাকারের পক্ষ থেকে ঋণ নিশ্চয়তা প্রকল্প চালু করা যেতে পারে। শেষ ব্যবস্থা হিসেবে তিনি বলেছেন শিল্প ক্ষেত্রে স্বায়ত্বশাসনের কথা। আর্থিক ক্ষেত্রকে মজবুত করতে এই ব্যবস্থার প্রয়োজন বলে মনে করেন ৮৮ বছরের বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহ।

আরও পড়ুন: আন্দামান-নিকোবরেও হাই স্পিড ইন্টারনেট, সমুদ্রের নীচ দিয়ে ওএফসি লিঙ্কের সূচনা প্রধানমন্ত্রীর

কিন্তু সরাসরি আম জনতার পকেটে নগদ অনুদান দিলে অর্থনীতি তথা রাজকোষেও তার প্রভাব পড়ে। তাতে সরাকরকে ঋণ নিতে হয় এবং তাতে দেনার বোঝা বেড়ে যায়। কিন্তু মনমোহন সিংহের যুক্তি, ধার করে যদি কারও জীবনরক্ষা হয়, জীবিকা নিশ্চিত হয় এবং আর্থিক বৄদ্ধি তরাণ্বিত হয়, তা হলে সেটা করাই উচিত। তিনি বলেন, ধার করতে লজ্জা পাওয়া উচিত নয়, কিন্তু সেই ঋণের টাকা কী ভাবে কোন খাতে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা ভবিষ্যতের কথা ভেবে করা উচিত।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু তাই বলে সব ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হওয়া উচিত নয় বলেই মনে করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। বরং উদার অর্থনীতির পক্ষেই সওয়াল করেছেন তিনি। মনমোহন সিংহের মতে, গত তিন দশকে ভারতের বাণিজ্যনীতিতে শুধু যে উচ্চবিত্ত শ্রেণির জন্য সুবিধা হয়েছে এমন নয়, বরং সমাজের সব স্তরের সাধারণ মানুষ তার সুবিধা পেয়েছেন। এই মন্দা যে আরও গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে, তেমন ভবিষ্যদ্বাণীও করেছেন মনমোহন সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement