নিমিশা প্রিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
আদতে কেরলের বাসিন্দা, পেশায় নার্স নিমিশা প্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্ট। নিমিশার বিরুদ্ধে এক প্রৌঢ়কে খুনের অভিযোগ এনেছে ইয়েমেনের একটি পরিবার। এই পরিস্থিতিতে মেয়েকে বাঁচাতে পশ্চিম এশিয়ার ওই দেশে যেতে চান নিমিশার মা। গত বৃহস্পতিবার ইয়েমেন যাওয়ার আর্জি নিয়ে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তাদের অবস্থান জানাতে বলেছে উচ্চ আদালত।
২০১১ সাল থেকে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় নার্স হিসাবে কাজ করছেন নিমিশা। ২০১৭ সালে তালাল আবদো মাহদি নামের এক প্রৌঢ়কে দেখভালের সময় তাঁকে খুন করার অভিযোগ ওঠে নিমিশা এবং তাঁর সঙ্গী, ইয়েমেনের নাগরিক হানানের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, প্রথমে ইন্জেকশন দিয়ে খুন করে, পরে দেহটি একটি জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। নিমিশা অবশ্য পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে জানিয়েছিলেন, নিহত ব্যক্তি তাঁর পাসপোর্ট আটকে রেখেছিলেন। তাই ওই ব্যক্তিকে ওষুধ দিয়ে অচেতন করে পাসপোর্টটি উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওষুধের মাত্রা বেশি হওয়ায় প্রাণ হারান বছর ৫৬-র ওই প্রৌঢ়।
নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে গ্রেফতার হন নিমিশা এবং তাঁর সঙ্গী। তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় সঙ্গীটিকে। মৃত্যুদণ্ডের সাজার বিরুদ্ধে সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নিমিশা। গত ১৩ নভেম্বর তাঁর আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত। নিমিশার প্রাণভিক্ষার বিষয়টি এখন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্টের কাছে বিচারাধীন।
এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক স্তরে বিষয়টি নিয়ে যাতে ভারত ইয়েমেনের সঙ্গে কথা বলে সেই আর্জি নিয়ে দিল্লি হাই কোর্টে যান নিমিশার মা। এর পাশাপাশি ইয়েমেনে গিয়ে নিহতের পরিবারকে ‘ক্ষতিপূরণ’ তুলে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ারও আবেদন জানান তিনি। আদালতে মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত নার্সের মা জানান, তাঁর মেয়ের আট বছরের একটি সন্তান রয়েছে। তাই সব দিক বিবেচনা করেই তাঁকে যেন অনুমতি দেওয়া হয়।
অন্য দিকে, পশ্চিম এশিয়ার দেশটিতে টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সন্ত্রাসবাদ-সহ বিবিধ কারণে ইয়েমেনে ভারতীয়দের যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বিদেশ মন্ত্রক। বৃহস্পতিবার অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের কৌঁসুলি জানান, এই বিধিনিষেধ শিথিল করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রকে দ্রুত অবস্থান জানাতে বলেছে হাই কোর্ট। এর আগে এই মামলার শুনানিতে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্র মধ্যস্থতা করুক— এমন আর্জিতে কর্ণপাত করেনি আদালত। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের সাজা রুখতে কেন্দ্রকে সম্ভাব্য আইনি পথ বাতলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।