বাড়বে উষ্ণতম দিন। ফাইল চিত্র
বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও সেই মাপকাঠিতে ভারতের কী অবস্থা, তা নিয়ে এত দিন সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য ছিল না। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের জলবায়ু সংক্রান্ত প্রথম রিপোর্টে (অ্যাসেসমেন্ট অব ক্লাইমেট চেঞ্জ ওভার দ্য ইন্ডিয়ান রিজিয়ন) সে সংক্রান্ত তথ্য এবং সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের আভাসও পাওয়া গিয়েছে।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রিপোর্ট আরও বলছে, আজ থেকে ৮০ বছর পরে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়াতে পারে গড়ে ৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। উষ্ণ দিন ও রাতের সংখ্যা যথাক্রমে ৫৫ ও ৭০ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছে রিপোর্ট। পাল্লা দিয়ে বাড়বে তাপপ্রবাহের সংখ্যাও। যা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই আলোচনা শুরু হয়েছে আবহবিদ মহলে।
সংশ্লিষ্ট রিপোর্টের অন্যতম সম্পাদক তথা ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিয়োরোলজি’-র সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ রিসার্চের প্রধান বিজ্ঞানী আর কৃষ্ণন বলছেন, ‘‘অনলাইনে রিপোর্টটি এ দিন বেরিয়েছে জানি। কিন্তু আগামী শুক্রবার রিপোর্টটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ হওয়ার কথা। তার পরেই এ বিষয়ে বিশদে বলব।’’
আরও পড়ুন: শহরে রেকর্ড সংক্রমণ, বেসরকারি ক্ষেত্রে শয্যা বৃদ্ধির প্রস্তাব
তবে অনলাইনে প্রকাশিত রিপোর্টে দেশের জলবায়ু সংক্রান্ত যে ঘটনাক্রমের উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন আবহবিদদের একাংশ। যেমন, রিপোর্টে দেওয়া তথ্য বলছে, ১৯৫১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে খরার সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার সঙ্গে গ্রীষ্ণকালীন বৃষ্টিপাত হ্রাসের মতো কারণ জড়িত। গত বছরই অবশ্য তার প্রমাণ মিলেছিল। দেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ এলাকাই সে সময়ে খরার কবলে পড়েছিল। উল্টো দিকে, কখনও আবার স্থানীয় ভাবে অল্প সময়ের মধ্যে এত পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, যা আঞ্চলিক বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানাচ্ছে রিপোর্ট।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানাচ্ছেন, আগে ভারী বৃষ্টি হওয়ার জন্য গভীর নিম্নচাপ তৈরির প্রয়োজন হত। কিন্তু বর্তমানে সে রকম নিম্নচাপ ছাড়াই স্থানীয় ভাবে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। অধিকর্তার কথায়, ‘‘কলকাতা-সহ রাজ্যের একাধিক জায়গাতেই ইদানীং বৃষ্টিপাতের এই ধরন লক্ষ করছি। স্থানীয় ভাবে ভারী বৃষ্টি হওয়ার জন্য সেই অর্থে বড় কোনও নিম্নচাপের দরকার পড়ছে না।’’
আরও পড়ুন: লাদাখ উস্কে দিচ্ছে ইন্দো-চিনের ৪৫ বছর আগের স্মৃতি
সংশ্লিষ্ট রিপোর্টের অন্যতম লেখক তথা ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিয়োরোলজি’-র বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথিউ কোলের আবার বক্তব্য, ‘‘১৯৫১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ভারত মহাসাগরের উষ্ণতা গড়ে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। যেখানে বিশ্বে সমুদ্রের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধিও সেই বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রবণতার দিকেই ইঙ্গিত করছে, যা আগামী দিনেও চলবে।’’